শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৭ দিন পর অনশন ভাঙলেন। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থরা হাসপাতাল থেকে অনশনস্থলে আসেন।

পরে সেখানে সকাল ১০টা ২২ মিনিটে উপস্থিত সবার সামনে তারা পানি পান করে অনশন ভাঙেন। তবে অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র ইয়াসির সরকার বলেন, আমরা অনশন কর্মসূচি থেকে সরে এলেও উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

এর আগে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে অনশন ভাঙার আশ্বাস দেন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর চারটায় ড. জাফর ইকবাল সস্ত্রীক উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। তিনি দুই ঘণ্টার বেশি সময় অনশনস্থলে বসে শিক্ষার্থীদের সব কথা শোনেন। শিক্ষার্থীরা গত ১৬ জানুয়ারি তাদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনা বর্ণনা করেন। পরে সকাল আটটার দিকে তারা অনশন ভাঙবেন বলে জাফর ইকবালকে আশ্বাস দেন।

এ সময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলার ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। এখানে শিক্ষার্থীরা সবাই শীতে কষ্ট করছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ কিন্তু তাদের জন্য কোনো মেডিকেল টিম নেই। যারা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করত তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। যা খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ।

ভোর চারটায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. জাফর ইকবাল সস্ত্রীক উপস্থিত হন

শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ ও দাবি শোনার পর ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে গণমাধ্যমের সামনে কথা দিয়েছ, এই অনশন ভাঙবে। তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দেবে এটা মানা যায় না। সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা করা হয়ে গেছে, আদালতে তোলা হবে। তারা কথা দিয়েছেন ছাত্রদের জামিন দেওয়া হবে।’

এ সময় তিনি আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় সাবেক শিক্ষার্থী গ্রেফতারের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের সাহায্য করলে যদি অ্যারেস্ট হতে হয় তাহলে আমি হব। আমি তোমাদের এই ১০ হাজার টাকা দিলাম। এ টাকা দিয়ে তোমাদের তেমন কিছু হবে না জানি। কিন্তু আমি দেখতে চাই, সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কি না।’

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক

এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- আন্দোলনরত দুই-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’ 

পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার পর এই আন্দোলন ভিসির পদত্যাগ আন্দোলনে রূপ নেয়।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ জন শিক্ষার্থী।

এমএসআর/জেএস