উন্মুক্ত স্থানে আবর্জনার ছড়াছড়ি, ঢাকনাবিহীন ড্রেন, সুয়ারেজ অব্যবস্থাপনা, সংস্কার কাজের উচ্ছিষ্ট ও ময়লায় সয়লাব। এমন চিত্র ঢাকা কলেজের আবাসিক এলাকার। যা দেখে সহজেই মনে হতেই পারে এ যেন ‘আবর্জনার ভাগাড়’।

কালেভদ্রে এসব আবর্জনা পরিষ্কার করা হলেও সেগুলো নির্দিষ্ট স্থানে না রেখে পাশের উন্মুক্ত স্থানে জমা করে রাখা হচ্ছে। এতে কিছুসময় পর আবারও আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, সৌন্দর্য হারাচ্ছে কলেজ। একইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে ঢাকা কলেজ ঘুরে দেখা যায়, মূল একাডেমিক এলাকা বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেও পেছনের আবাসিক ছাত্রাবাস ও কর্মচারী কোয়ার্টার এলাকার অবস্থা করুণ। ছাত্রাবাসগুলোর সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে উন্নয়ন কাজের উচ্ছিষ্ট। অথচ শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে ফেরার আগে গত বছরের অক্টোবর মাসেই সংস্কারকাজ শেষ হয়। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এসব উচ্ছিষ্ট আবর্জনা সরানো সম্ভব হয়নি প্রশাসনের।

কর্মচারী কোয়ার্টারের সামনে-পেছনেও ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জমানো ময়লা এবং আগাছায় পুরো কোয়ার্টার এলাকাজুড়েই স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সাধারণ ময়লা আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না নিয়ম। যেখানে সেখানে কাগজ, পলিথিনসহ অন্যান্য আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। কর্মচারী কোয়ার্টারেরের ঘরোয়া আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে ছাত্রাবাসের মাঠে।

এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়া, পুকুরপাড়, খেলার মাঠ, মসজিদ, বকুলতলাসহ অন্যান্য জায়গায়ও চোখ ফেরালেই দেখা যায়- খালি বোতল, কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিক। এই পুরো আবাসিক এলাকা ছাত্রাবাস ও কর্মচারী কোয়ার্টার থাকলেও একটি ডাস্টবিন বা ময়লার ঝুড়ি নেই।

শিক্ষার্থীরা যা বলছেন

কলেজের মূল একাডেমিক এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্বারোপ করা হলেও কেন আবাসিক এলাকার করুণ অবস্থা তা নিয়ে প্রশ্ন শিক্ষার্থীদেরও। কলেজের দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী ইমামুল কবির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রাবাসের সামনে ময়লা আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পানির রিজার্ভ ট্যাংকের ওপর এভাবে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখার বিষয়টি নজিরবিহীন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই পানি পান করি। দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময়ে এগুলো সারানো সম্ভব হয়নি। সার্বিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরও সচেতন হওয়া জরুরি।

সাকিব আল হাসান নামে আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবেশ সুন্দর বানাতে শিক্ষার্থীদেরও আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কেননা আমরা যদি আমাদের পরিবেশ নষ্ট করি তবে কষ্টটা আমাদের। কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ সবাইকেই সচেতন হতে হবে। তাছাড়া পরিবেশ রক্ষায় এই মুহূর্তে দ্রুত পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।

ঠিকাদারের ওপর দায় চাপাচ্ছে ছাত্রাবাস প্রশাসন

ছাত্রাবাসের সামনের ময়লার স্তূপের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের দায়ী করেছেন ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়করা। তারা বলছেন, ছাত্রাবাসের সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পর এসব উচ্ছিষ্ট অপসারণ করা ঠিকাদারদের কাজ। কিন্তু তারা সেটি করেননি। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজের উচ্ছিষ্ট পড়ে আছে। তাছাড়া পরিমাণে অনেক বেশি হওয়ায় ও এ সংক্রান্ত বাজেট না থাকায় ছাত্রাবাসের পক্ষ থেকে কাজটি করতে পারছি না।

আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের শ্রমিক নিয়ে আসতে বলেছি। খুব দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।

সুয়ারেজ লাইনের পানি ড্রেনে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, ছাত্রাবাসের পক্ষ থেকে এটা সংস্কার করা সম্ভব না। কারণ এখানে অনেক খরচের বিষয় আছে। প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। বাজেট স্বল্পতার কারণে এ কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।

পশ্চিম ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক নকুল চন্দ্র পাল বলেন, কাজ শেষ হয়নি। সংস্কার কাজের উচ্ছিষ্ট ঠিকাদারদের সরানোর কথা। এগুলো আমাদের কাজ না।

দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনও ঠিকাদারদের ওপর দায় চাপিয়ে বলেন, তারা যদি কথা না শোনে তাহলে আমরা কী করতে পারি। আমরাও চাই ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। বারবার বলার পরও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

দ্রুতই বর্জ্য সরানোর আশ্বাস উপাধ্যক্ষের

ঢাকা কলেজের আবাসন কমিটির চেয়ারম্যান ও উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এটিএম মইনুল হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলা হয়েছে, যেন তারা সংস্কারকাজের উচ্ছিষ্ট দ্রুত সরিয়ে নেন। তাছাড়া অন্যান্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়কদের বলেছি ব্যবস্থা নিতে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

সুন্দর পরিবেশে ফেরাতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ চান অধ্যক্ষ

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি শুধুমাত্র কলেজ প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট ও বিএনসিসি’র সদস্যদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। ছাত্রাবাস এলাকা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়কদের। তারা চাইলেই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।

এছাড়া যেসব ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের পরও তাদের কাজের উচ্ছিষ্ট ছাত্রাবাসের সামনে স্তূপ করে রেখেছে, পরবর্তীতে তাদের কলেজে আর কোনো কাজ দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

আরএইচটি/এমএইচএস