সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগ নেতারা খাবারের মান দেখছেন

ক্যান্টিনে ঢুকতেই ভেসে আসে উৎকট গন্ধ। চোখে পড়ে অপরিচ্ছন্ন টেবিল, প্লেটে খাবারের ওপর মাছি। স্যাঁতস্যাঁতে রান্নাঘরে ময়লা ছিটানো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হলের ক্যান্টিনেই এমন চিত্র নিত্যদিনের।

হলের ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়ার নজিরও কম নেই। সঙ্গত কারণেই খাবারের মান ও পরিবেশ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তবে এবার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। নতুন কমিটি ঘোষণার পর দায়িত্ব পেয়ে খাবারের মান পরীক্ষায় নেমেছেন তারা। সেই সঙ্গে মান বাড়াতে দিচ্ছেন আলটিমেটাম। 

প্রায় চার বছর পর গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন কমিটির পদধারীরা।

সম্প্রতি নেতাকর্মীদের নিয়ে হলের ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া ও খাবারের দোকান পরিদর্শন করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। গত মঙ্গলবার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি তানভীর সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার ক্যান্টিন পরিদর্শন করেন।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে খাবারের মান দেখছেন নেতারা

শুক্রবার মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান খান সোহান ও সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান এবং পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন হলের সভাপতি সুমন খলিফা ও সাধারণ লুৎফুর রহমান ক্যান্টিন ও খাবার দোকান ঘুরে দেখেছেন। অন্যান্য হলের নেতারাও শিগগিরই পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে।

পরিদর্শন শেষে ছাত্রলীগ নেতাদের চোখেও ধরা পড়েছে ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পরিবেশ। তারা বলছেন, এভাবে চলতে পারে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ-খাবারে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। দ্রুত সময়ে এসবে পরিবর্তন আনতে ক্যান্টিন মালিকদের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। 

এছাড়া, হলের ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়া থেকে টাকা ছাড়া (ফাউ) খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ক্যান্টিনের দায়িত্বরতদের দাবি, খাবারের মান খারাপের পেছনে দায়ী অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটি অন্যতম। আর এ অভিযোগের তির ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ক্যান্টিনে চাঁদা দাবির অভিযোগও রয়েছে। তবে নব্য পদধারীরা বলছেন, এখন থেকে কেউ ফাউ খেলে বা চাঁদা চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জসীম উদ্দীন হলে ক্যান্টিন ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলছেন নেতারা 

সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি সোহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা ছিল দায়িত্ব পেয়েই যেন আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করি। আর তাই শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শন করেছি। সত্যিকার অর্থেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হয়, মানও ততটা ভালো না। এসব পরিবর্তনের জন্য আমরা তিনদিনের আলটিমেটাম দিয়েছি।

ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অনেকে টাকা ছাড়া খেয়ে চলে যান। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কেউ যদি এভাবে খান, তবে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। অন্য কেউ যদি ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে খেয়ে চলে যান, সে দায় হল ছাত্রলীগ নেবে না। অচেনা-অপরিচিত কাউকে ফ্রিতে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ কেন খাবার দেবে?

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, হলের খাবারের মান ভালো নয়। পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। এ অবস্থার পরিবর্তনে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগ নেতারা ক্যান্টিনের বাজারের মান দেখছেন

ছাত্রলীগ নেতাদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে খাবারের মান এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রলীগের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ক্যান্টিনের খাবারের মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

জসীম উদ্দিন হলের শিক্ষার্থী আরিফ পাটোয়ারী বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে শোনা যাচ্ছে যে হলের ক্যান্টিনে অনেকেই ফাউ খান। এর প্রভাব পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। ক্যান্টিন মালিকরাও বাধ্য হয়ে খাবারের মান কমিয়ে দেয়। এমন সংস্কৃতি বন্ধ হলে খাবারের মান উন্নত হবে বলে আশা করছি।

ক্যান্টিন মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে খাবারের মান উন্নয়নের কথা নেতারা বলছেন, সেভাবে করতে হলে খাবারের দাম বাড়াতে হবে। চাল, তেল থেকে শুরু করে সবকিছুরই দাম বেশি। এরমধ্যে কেউ কেউ টাকা না দিয়েও খেয়ে চলে যান। এছাড়া হলের দোকানগুলোতে খাবার বিক্রিও বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এগুলো বন্ধ হলে মান আরও বাড়ানো সম্ভব।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সংকট নিয়ে হল ছাত্রলীগের নেতাদের কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা যেন পূরণ হয়, অধিকার আদায় হয়, তারা যেন মানসম্মত জীবনযাপন পান, খাবারের মান যেন উন্নত হয় এবং সামাজিক, সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিকভাবে হল যেন হল উজ্জীবিত থাকে, সেভাবেই নেতৃত্ব দেওয়ার সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে।

এইচআর/আরএইচ