সৈয়দ আবুল মকসুদ মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করতেন। সমাজের কোনো বড় সংকট এলেই তিনি মানুষকে নিয়ে সেই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসতেন। দেশের যেকোনো জায়গায় অন্যায় হলেই তিনি সেখানে চলে যেতেন এবং সবার মধ্যে সাহস সঞ্চার করে ভয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। একইসঙ্গে তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে মানুষের চিন্তার জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক একজন মানুষ।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ’ আয়োজিত লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে ‘বহুমাত্রিক সৈয়দ আবুল মকসুদ’ শীর্ষক এক স্মরণ সভায় বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন প্রবীণ রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।

স্মৃতিচারণ করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রকৃত অর্থেই বহুমাত্রিক একজন মানুষ ছিলেন। তার কাজের ক্ষেত্র ছিল প্রসারিত ও বিচিত্র। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন একাডেমিশিয়ান, লেখক ও সাংবাদিক অন্যদিকে তিনি ছিলেন একজন সচেতন রাজনীতিক। তিনি যে আদর্শ ধারণ করতেন, তার চর্চাও করতেন। তার কথা ও কাজের মধ্যে মিল ছিল। তিনি তার লেখনীর ধার দিয়ে অত্যাচারীকে বিপর্যস্ত করতেন এবং লেখার শেষের দিকে তিনি পাঠককে লেখার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারতেন।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ জাতির অন্যতম বিবেক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। কোনো জাতীয় দুর্যোগ, কোনো অঞ্চলে নারী, শিশু ও আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন- এসব ছিল আমার আর তার মধ্যকার আলোচনার বিষয়বস্তু। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা করণীয় ঠিক করতাম। গত ৩০ বছরে তার সঙ্গে আমি কয়েক লক্ষ কিলোমিটার ঘুরেছি মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে। আবার ঢাকায় ফিরে আমরা রাজপথে দাঁড়িয়েছি। সৈয়দ আবুল মকসুদ পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে যেমন সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন, তেমনি নারী ও আদিবাসীদের উপর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। একইসঙ্গে বিভিন্ন অন্যায়ের বিচারের দাবিতে তিনি লড়াইও করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদের জীবনের দুটি দিক ছিল। একদিকে তিনি ছিলেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও গবেষক, অন্যদিকে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী। তবে তার এই দুইটি দিকের মধ্যে মিল ছিল। তার সাহিত্যের মধ্যে রসবোধ ছিল, সাংবাদিক হিসেবে তিনি ছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, একইসঙ্গে তার গবেষণার মধ্যেও ছিল মৌলিকত্ব। সবকিছুকেই তিনি একাত্ম করেছিলেন। অন্যদিকে, তিনি কর্মী হিসেবে সাহসের সঙ্গে মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন।

এইচআর/আইএসএইচ