চাহিদা বাড়লেও দেশে দিন দিন কমে আসছে গমের আবাদ। এর মধ্যেই এবার দেখা গেল দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অপরিপক্ব গম কেটে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এক মাস পরই কাটা-মাড়াই করার উপযুক্ত হবে এসব গম। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলায় এসব সবুজ গম পরিপক্ব হওয়ার আগেই কেটে বিক্রি করা হচ্ছে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে। তবে এ ব্যাপারে কৃষকরা বলছেন, এখন গম না কাটলে বোরো ধান আবাদ করা সম্ভব হবে না।

দিনাজপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু গম আবাদ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। জেলার ফুলবাড়ী, কাহারোল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা গম রোপণ করে ফলনের দিকে না গিয়ে এভাবেই কাঁচা গম কেটে গোখাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করছেন।

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, বাজারে গরুর জন্য ঘাসের থেকে গমের গাছের চাহিদা এখন বেশি। এ জন্য গমের গাছ কেটে বিক্রি করছি। এতে গমের থেকে গমের গাছ বিক্রি করে বেশি লাভ হচ্ছে।

বিরল উপজেলার কৃষক মো. লুৎফর রহমান বলেন, এবার চার বিঘা জমিতে গম রোপণ করেছি। এরই মধ্যে গমের শীষ বের হয়েছে। সেই সবুজ গম বাজারে এনেছি বিক্রি করতে। আমন ধান উঠার পর জমিতে গম লাগিয়েছি। এ গম পাকতে আরও ৩০-৪০ দিন লাগবে। এখন না কাটলে বোরো ধান আবাদ করা সম্ভব হবে না। আবার গরুর খাবার হিসেবে বাজারে গম গাছের চহিদাও রয়েছে বেশ। তাই গম গাছ কেটে বিক্রি করতে এনেছি। জমিতে এখন বোরো ধান লাগাব।

দিনাজপুর জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা এস.এম. সাইফুল ইসলাম বলেন, গম মূলত আবাদ হয় মানুষের খাদ্য হিসেবে। কিন্তু গমখেত কেটে গবাদিপশুর ঘাস হিসেবে বিক্রি করার এই প্রবণতা দেশে গমের উৎপাদন কমিয়ে আনবে। এতে দেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হবে। 

দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা গম কেটে গোখাদ্য হিসেবে বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, জেলায় ৪২ হেক্টর জমির গম কেটে গোবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে বিক্রি হয়েছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। কেউ গবাদিপশুর খাবার হিসেবে গম চাষ করে থাকলে সেটি ঠিক আছে। তবে যারা সশ্য দানা হিসেবে গম আবাদ করছেন, তারাও যদি এই প্রবণতার দিকে যায় তাহলে সার্বিক গম উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ইমরান আলী সোহাগ/আরআই