টাঙ্গাইলের গোপালপু‌রে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী ও গণহত্যার অভিযোগে দুই যুদ্ধাপরাধী‌কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে পুলিশ। শুক্রবার (০৪ মার্চ) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক মতিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের বেড়াডাকুরি গ্রামের মৃত সবুর মাস্টারের ছেলে মনিরুজ্জামান কোহিনূর ও চাতুটিয়া গ্রামের মৃত শফিউদ্দিনের ছেলে আলমগীর হোসেন তালুকদার।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ওই দুইজন ১৯৭১ সালে পাকস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী এবং রাজাকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৩০ জুন রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনূর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ঝাওয়াইল বাজারে হামলা চালায়।এ সময় ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক, সুরেন্দ্রবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক মসলিম উদ্দীনকে আটক করে গোপালপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে টানা এক সপ্তাহ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তারপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। আজও তার পরিবার লাশের সন্ধান পায়নি। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার শহীদ মসলিম উদ্দীনকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেন। 

এদিকে ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনূর ও আলমগীর হোসেন তালুকদার একদল রাজাকার ও আলবদরকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদপুর গ্রামে হামলা চালায়। বর্বর হানাদার বাহিনী আওয়ামী লীগের এমএনএ হাতেম আলী তালুকদারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পর ১৭ জনকে হত্যা করে।

মামলায় আরও বলা হয়, একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত হওয়ার আগের দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তারা ঢাকায় আসেন। ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি খান সেনার সঙ্গে মনিরুজ্জামান কোহিনূর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

পরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। এরপর শিমলা চুক্তি অনুযায়ী মুক্তি পেয়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে পাকিস্তান চলে যান। পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে নব্বইয়ের দশকে জাপান যান। ২০০২ সালে তিনি দেশে ফেরেন।  

অপরদিকে রাজাকার আলমগীর হোসেন তালুকদার ৭৬ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসে‌বে যোগ দেন। পরে পৌরশহরের সূতি দাখিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে গত নভেম্বরে অবসরে যান।

গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাপত্র মোতাবেক মনিরুজ্জামান কোহিনুরকে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড়ের বাসা থেকে এবং আলমগীর হোসেনকে গোপালপুর পৌরশহরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপপরিচালক মতিউর রহমান বলেন, মনিরুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। আর আলমগীর হোসেনকে সাভার পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে আগামী রোববার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এগুলো ১৯৭১ সা‌লের মু‌ক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঘটনা। যখন ট্রাইব্যুনা‌লের নজ‌রে আসে তখন সে‌টি আমলে নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হয়। ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারপরও অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।

এদিকে দুই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতারের খবরে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের ফাঁসির দাবিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

অভিজিৎ ঘোষ/এসপি