পঞ্চগড়ে বাড়ছে পেঁপে চাষ
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। সমতল ভূমিতে চা ও কমলা চাষের পাশাপাশি দিন দিন বাড়ছে পেঁপে চাষ। ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় জেলার পাঁচ উপজেলার কৃষকদের মাঝে পেঁপে চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পেঁপের ছোট বড় অনেক বাগান রয়েছে। পাঁচ ফুট উচ্চতার গাছগুলোতে গুচ্ছাকারে ধরে রয়েছে পেঁপে। কোনোটা আকারে ছোট আবার কোনোটা বড়। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
কথা বলে জানা গেছে, দুই থেকে তিন বছর আগেও পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের চাষ হত না। বাড়ির আশপাশে দেশি জাতের দু-একটি পেঁপে গাছ দেখা গেলেও ছিল না কোনো বাগান। কৃষকরা কল্পনাও করেননি পঞ্চগড়ের মাটিতে পেঁপে চাষ হবে।
তবে হঠাৎ করে কয়েকজন উদ্যমী কৃষক নতুন জাতের রেডলেডি, সুইটলেডি ও টপলেডিসহ উন্নত জাতের পেঁপের চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো ও বাজারের চাহিদা বেশি থাকায় দিন দিন পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
বিজ্ঞাপন
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের মাটি বেলে দোঁআশ। এ জেলার সমতল ভূমিতে চা, কমলা, মালটা, ফুল, ড্রাগনসহ বিভিন্ন শাক সবজির চাষ হয়। পাশাপাশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পেঁপের চাষ স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত জাতের পেঁপের চারা রোপণের ৯০-১২০ দিনের মধ্যে ফল আসে। গাছের আকৃতি ছোট হলেও পেঁপের আকৃতি বেশ বড় হয়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলার হাট এলাকার সিদ্দিকী টি এস্টেটের মালিক ও আমেরিকা প্রবাসী মিজানুর রহমান সিদ্দিকী রঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ বছর আমার চা বাগানের পাশে পতিত দুই বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করি। আমার বাগানে রেডলেডি জাতের পেঁপের চারা রোপণ করেছি। এটি একটি হাইব্রিড জাত। এটি আকারে দেখতে বেশ বড় ও গাছের উচ্চা অনেক ছোট।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার বাগান থেকে এ পর্যন্ত ৩শ মণ পেঁপে বিক্রি করেছি। পেঁপে চাষে ফলন ভাল ও দাম বেশি পাওয়ায় আরও দুই বিঘা জমি পেঁপে চাষের জন্য প্রস্তুত করেছি। তবে কৃষি বিভাগ যদি আমাদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে সহযোগী করে তাহলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
একই কথা বলেন তরুণ কৃষক শ্যামল রায়। তিনি বলেন, আমি এক একর জমিতে পেঁপের বাগান করেছি। পেঁপের ফলনও ভাল পেয়েছি। বাজারে পেঁপের চাহিদাও প্রচুর। চাহিদা অনুযায়ী আমি পেঁপে দিতে পারি না। আমি ৯শ থেকে ১হাজার টাকা দরে পেঁপে বিক্রি করেছি। পাইকাররা বাগান থেকে পেঁপে কিনে নিয়ে যায়।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, পঞ্চগড়ে পেঁপে চাষ বর্তমানে বেশ লাভজনক হয়ে উঠেছে। কৃষকরা বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনে হাইব্রিড জাতের পেঁপের বীজ কিনে রোপণ করছেন। এর মধ্যে টপলেডি, রেডলেডি ও সুইটলেডি অন্যতম। এ জাতের বীজ প্রতি গর্তে একটি করে বপন করতে হয় এবং এই জাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ছোট থেকে গাছে পেঁপে ধরতে শুরু করে। কৃষকরা সবজি হিসেবে কাঁচা আবার অনেকে পাকা অবস্থায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে এ জেলায় আরও পেঁপে চাষের আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।
এসপি