এক টাকায় খেজুর গুড়
বাজারে প্রতি কেজি খাঁটি খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। কিন্তু মাত্র এক টাকায় বিশুদ্ধ খেজুর গুড় দিচ্ছে সওদাগর এগ্রো। মাদ্রাসা, এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রম নিবাসীদের পৌষের পিঠা খাওয়াতে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহীর ইয়াসির আরাফাত রুবেল।
এরই মধ্যে রাজশাহী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে তার এক টাকার খেজুর গুড়। খেজুর গুড়ের তৈরি পিঠা খেয়ে খুশিও লোকজন। তিনিও খুশি এমন আয়োজনে যুক্ত হতে পেরে।
বিজ্ঞাপন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় স্নাতকোত্তর ইয়াসির আরাফাত রুবেলের এই উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে। নগরীর রামচন্দ্রপুর কালোমিস্ত্রির মোড়ের বাসিন্দা আরাফাত রুবেল চাকরির পেছনে না ছুটে শুরু করেন ব্যবসা। প্রথমে গড়ে তোলেন আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠান। সেখানকার আয় থেকে গড়ে তোলেন সওদাগর এগ্রো।
ব্যতিক্রমী গরুর খামার গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। সওদাগর এগ্রোর সর্বশেষ সংযোজন চিনি ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত খেজুর গুড়। এরই মধ্যে দেশের সব অঞ্চলে পৌঁছে গেছে এই গুড়। সওদাগরের ঘানিভাঙা সরিষা তেল ও খাঁটি গাওয়া ঘি ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে।
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে সওদাগর এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইয়াসির আরাফাত রুবেল বলেন, আমরা রাজশাহীতে প্রতিনিধিত্ব করি দুটো জিনসি দিয়ে-একটি আম, অন্যটি খেজুর গুড়। সেই ভাবনা থেকে এবার নিজেই খেজুর গুড় তৈরি করেছি। এজন্য ৭০টি খেজুর গাছ ইজারা নিয়ে রস সংগ্রহ করেছি। ওই রস দিয়ে গুড় তৈরি করে সওদাগর এগ্রোর ফেসবুক পেজে দেই।
এরপর সারাদেশ থেকে ব্যাপক সাড়া পায়। অনেকেই একাধিকবার খেজুর গুড় নিয়েছেন। এখান থেকে ভালো লাভ আসছে। এরপর মাথায় আসে মাদ্রাসা, এতিমখানা এমনকি বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের কথা; যারা শীতে পিঠাপুলি খেতে পাননা।
তাদের পিঠা উৎসবের আয়োজন করতেই প্রতীকী মূল্য এক টাকায় খেজুর গুড় সরবরাহের উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে ফেসবুক পেইজে পোস্ট দেন। এরপর সারাদেশ থেকে লোকজন যোগাযোগ করতে থাকেন।
রাজশাহীর বিভিন্ন মাদ্রাসা, বৃদ্ধাশ্রম ও এতিমখানায় পৌঁছে দেওয়া হয় এক টাকার খেজুর গুড়। এক টাকায় খেজুর গুড় গেছে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সাভার, কেরানীগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
৫ কেজি থেকে ১০ কেজি যার যতটুকু প্রয়োজন, ওই এক টাকায় গুড় সরবরাহ করা হয়েছে। খেজুর গুড় পেয়ে বেশ আয়োজন করে পিঠাপুলিও খেয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত লোকজন। সেগুলোর ছবিও পাঠিয়েছেন তারা। এই কাজের অনুভূতি একেবারেই অন্য রকম।
রুবেল আরও বলেন, একদিন পিঠাপুলি তৈরির জন্য মা বাজার থেকে খেজুর গুড় নিয়ে আসতে বলেন। খেজুর গুড় নিয়েও আসি। কিন্তু সেই খেজুর গুড়ে পিঠাপুলি হয়নি। সব দুধ নষ্ট হয়ে গেছে। পরে জানতে পারি, খেজুর গুড়ে চিনি ও কেমিকেল মেশানো ছিল। এ ঘটনা থেকেই খাঁটি খেজুর গুড় তৈরির ভাবনা মাথায় আসে।
তিনি আরও বলেন, অনেককে বলতে শুনেছি চিনি না মেশালে খেজুর গুড় হয় না। চিনি না মেশালে গুড় জমাট বাঁধতে সময় লাগে, গুড় নরম থাকে। চিনি ছাড়া খেজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে দেখিয়েছি। সব মিলিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকার খেজুর গুড় বিক্রি করেছি এবার।
রাজশাহীর খাঁটি খেজুর গুড় দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ইয়াসির আরাফাত রুবেল। তিনি বলেন, এরই মধ্যে বিএসটিআই ও বিসিএসআইআর এর পরীক্ষার জন্য দিয়েছি। সেখান থেকে সনদ পেলে সারাদেশে পৌঁছে যাবে চিনি ও কেমিকেলমুক্ত রাজশাহীর বিশুদ্ধ খেজুর গুড়।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, জেলায় ৭ লাখ ৮০ হাজার খেজুর গাছ থেকে প্রতি শীত মৌসুমে ৮ হাজার টন খেজুর গুড় উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। জেলায় সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ আছে চারঘাট উপজেলায় ৩ লাখ ৯৬ হাজার।এছাড়া বাঘা উপজেলায় ২ লাখ ৯৯ হাজার এবং পুঠিয়া উপজেলায় ৮৫ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় বানান গাছিরা। মৌসুমি এই কর্মযজ্ঞে এই তিন উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার কৃষক যুক্ত। লাভজনক হওয়ায় প্রায় ৪ হাজার বাণিজ্যিক খেজুর বাগান গড়ে উঠেছে এই তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় খেজুর গুড়ের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া। এছাড়া বাঘা সদরেও বসে পাইকারি খেজুর গুড়ের হাট। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখান থেকেই সরবরাহ হয় রাজশাহীর খেজুর গুড়।
এসপি