প্রতিদিনের মতো সোমবার (২৮ মার্চ) স্কুলে যায় রেবা ও তার সহপাঠীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী স্কুলে শিক্ষা অফিসের দেওয়া আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ানোর কথা ছিল। এ কারণে বাড়ি থেকে ছাত্রীদের খাবার খেয়ে আসতে বলা হয়েছিল। সবাই খাবার খেয়ে স্কুলে উপস্থিত হয়েছিল। রেবাও বাড়ি থেকে ডিম ও মিষ্টিকুমড়ার তরকারি দিয়ে খাবার খেয়ে এসেছিল।

সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো শুরু হয়। ট্যাবলেট খাওয়ানোর আধা ঘণ্টা পর রেবা বমি করে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখান থেকে তাকে স্থানীয় গোপালপুর বাজারের ডাক্তার মিলনের কাছে নিয়ে গেলে, ডাক্তার তার অবস্থা খারাপ দেখে দ্রুত সদর হাসপতালে নিতে বলেন। 

শিক্ষকরা দ্রুত তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাতজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাট গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

রেবা খাতুন সদর উপজেলার উত্তর সমশপুর গ্রামের সাগর হোসেনের মেয়ে এবং হাট গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশব্যাপী কৈশোরকালীন পুষ্টি নিশ্চিত করতে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ করা আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। ট্যাবলেট খাওয়ানোর আধা ঘন্টা পর হঠাৎ করে রেবা খাতুনসহ তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখান থেকে তাদের স্থানীয় ডাক্তার মিলনের কাছে, পরে সেখান থেকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রেবাকে মৃত ঘোষণা করে। অন্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের তিনশোর বেশি শিক্ষার্থীকে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে। তাদের মধ্যে রেবা বেশি অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর আরও সাত শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে তারা সদর হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সাদি জানান, দুপুর থেকে এ পর্যন্ত সাতজন শিক্ষার্থী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সবাইকে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তারা ভালো আছে। 

তিনি আরও জানান, আয়রন ট্যাবলেট খেলে শরীরে গ্যাস বৃদ্ধি পায়। যদি কোনো ব্যক্তি এই ট্যাবলেট খায়, তার যদি কোনো ইফেক্ট হয়, তাহলে তার গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। সর্বোচ্চ পাতলা পায়খানা হতে পারে। এই ট্যাবলেট খেয়ে কেউ মারা গেছে এমন কোনো রেকর্ড নেই।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রাণী দেবনাথ বলেন, আয়রন ট্যাবলেট থেকে মৃত্যুর কোনো নজির নেই। এমনকি ওষুধ যদি মেয়াদোত্তীর্ণও হয় তবুও সর্বোচ্চ পাতলা পায়খানা হতে পারে। তারপরও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করার জন্য সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ আনোয়ারুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এসপি