রংপুরের গঙ্গাচড়ায় টাকার অভাবে পাঠ্যবই কিনতে না পারা সাত মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অধ্যায়নরত উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া দরিদ্র পরিবারের সাত ছাত্রীকে পাঠ্যবই দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় ড্রেস, খাতা-কলম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

রোববার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সাত শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ উদ্দিন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাজু আহম্মেদ লাল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাবিয়া বেগম, সমবায় কর্মকর্তা আবতাবুজ্জামান চয়ন, সমাজসেবা কর্মকর্তা মোসাদ্দেকুর রহমান, গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম লেবু প্রমুখ।

সম্প্রতি ইউএনও তিস্তা-ঘাঘট নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়ার অসহায়, দুস্থ, হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়াতে নিজ কার্যালয়ে ‌‘মানবিক সহায়তা বক্স’ স্থাপন করেন। সেই মানবিক বক্সের অনুদান থেকে সাত শিক্ষার্থীর হাতে তাদের প্রয়োজনীয় পাঠ্যবই তুলে দেন।

ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিকে (এইচএসসি) অধ্যয়নরত ওই ৭ শিক্ষার্থীর পরিবার টাকার অভাবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যবই কিনে দিতে পারেননি। এতে তাদের লেখাপড়ায় ব্যঘাত ঘটে। এ পরিস্থিতিতে ওই সাত শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের জন্য আবেদন করেন। পরে ইউএনও তার কার্যালয়ে স্থাপিত মানবিক সহায়তা বক্স থেকে পাঠ্যবইয়ের ব্যবস্থা করেন।

এ ব্যাপারে ইউএনও এরশাদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত সাতজন দরিদ্র, অসহায়  ও মেধাবী ছাত্রী স্বপ্নপূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল। তাদের অদম্য মনোবলে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দারিদ্র্য। ওই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণে সঙ্গী আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করেছি মাত্র।

তিনি আওর বলেন, মানবিক সহায়তা বক্সে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সাতজন ছাত্রীকে তাদের প্রয়োজনীয় সব পাঠ্যবই কিনে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের প্রয়োজনীয় ড্রেস, খাতা-কলম ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। অদম্য মেধাবী ছাত্রীদের স্বপ্ন পূরণে উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকতে পেরে আনন্দিত।

এর আগে গত ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার এক দিনমজুরের ছেলে মেধাবী শিক্ষার্থী মাহফুজার রহমানকে কলেজে ভর্তি হতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন ইউএনও এরশাদ উদ্দিন। মাহফুজার রহমান গঙ্গাচড়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-ফাইভ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। 

পরে রংপুর পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি সুযোগ পেলেও তার মা দিনমজুর হওয়ায় মাহফুজার ভর্তি হতে পারছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে ওই শিক্ষার্থীকে কলেজে ভর্তির জন্য মানবিক সহায়তা বক্সে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সহযোগিতা করেন ইউএনও।  

ভর্তি হওয়ার বাধা কেটে যাওয়ায় খুশি হয়ে মাহফুজার রহমান বলেন, স্বপ্ন ছিল পলিটেকনিক কলজে পড়ার, কিন্তু টাকার অভাবে তা ভেঙে গিয়েছিল। ইউএনও স্যার আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমাকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে কোনো ধরনের সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ ‌‘মানবিক সহায়তার জন্য ২ টাকা চাচ্ছেন ইউএনও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে এরশাদ উদ্দিন তার নিজ কার্যালয়ে মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপন করেন। তার উদ্দেশ্য উপজেলার অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষদের পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

এ জন্য সমাজের বিত্তবানসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা বক্সে টাকা ফেলতে উৎসাহিত করছেন তিনি। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই