উজানের পানিতে এবার তলিয়ে গেল কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনার ধনপুর ইউনিয়নের চাচুয়ার হাওর। গতকাল (মঙ্গলবার) পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে এই হাওরটি। স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে এ হাওরে জমির পরিমাণ ৭০০-৮০০ একর। তবে কৃষি অফিস বলছে ডুবে যাওয়া এই হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২০০ একরের মতো।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছিল, সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছিল- পানি বেড়েছে, তবে মূল হাওরগুলোতে এর প্রভাব পড়বে না। হাওরে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পানি প্রবেশ করেছে, মূল হাওরের জমিগুলো তারচেয়ে ১ মিটার উপরে আছে। তবে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে আর সেই পানি যদি ঢলে নেমে আসে তাহলে হাওরের অনেক জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল।

গত শনিবার থেকে উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি হয়ে নেমে আসা পানিতে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার নদীর তীরবর্তী চর আর খাল-বিলে চাষ হওয়া নিচু বোরো জমির ফসল তলিয়ে গেলেও এবার তলিয়ে যেতে শুরু করেছে মূল হাওরগুলো। ধনপুর ইউনিয়নের আফাইন্নের হাওর ও চাচুয়ার হাওর এ দুটিই মূল হাওর। 

ধনপুরের কৃষক রনজিৎ চন্দ্র দাস বলেন, গতকাল রাত থেকে কৃষকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও হাওরের ফসল রক্ষা করতে পারেনি। হাওরের চারদিকে যেদিক দিয়ে একটু পানি ঢুকেছে কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে সেখানেই মাটি ফেলেছে। যেখানে বাঁধ প্রয়োজন সেখানে দিয়েছে। তারপরও বাড়তি পানির চাপে আর শেষ রক্ষা হলো না। দেখতে দেখতে তলিয়ে গেল কৃষকের সারা বছরের কষ্টের ফসল।

ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দাস বলেন, পানি বাড়ার শুরু থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণসহ স্থানীয় কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছে বাঁধ রক্ষা করতে। ফসল রক্ষার্থে যখন যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন কৃষকেরা সে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তুু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সারা বছরের স্বপ্নের ফসল তলিয়ে গেল নিমিষেই। 

তিনি আরও বলেন, গতকাল রাতেই চাচুয়ার বাঁধ নির্মাণের জন্য এক্সেভেটর পাঠানো হয়েছিল। কিন্তুু পানির গতিবেগ দেখে যারা গিয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়ে ফসলের মায়া ত্যাগ করে চলে এসেছে। এই হাওরে জমির পরিমাণ হবে ৭০০-৮০০ একর। তবে গ্রামের পাশের কিছু কিছু উচু জমি ছাড়া বেশিরভাগই হাওরের ফসলই তলিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে ইটনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল সাহা বলেন, উজানের ঢলে নেমে আসা পানিতে এ জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইটনা উপজেলা। আর এ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধনপুর ইউনিয়নের আফাইন্নের হাওর আর চাচুয়ার হাওর। গত দুইদিন আগে আফাইন্নের হাওরে ৫০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। আজ চাচুয়ার হাওরে ৭০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, গত দুইদিন আগেও ২-৩ ইঞ্চি করে পানি বেড়েছে কিন্তুু গতকাল মঙ্গলবার সেটা দ্বিগুণ হয়ে ৬-৭ ইঞ্চি বেড়েছে। 

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮ ইউনিয়নের মূল হাওরের জমিগুলোতে এখনও পানি ঢুকেনি। বাঁধগুলোও এখনো ঠিক আছে। লোকজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। ইটনার জিওলের বাঁধের পাশে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ফসল রক্ষা করা যায়। বর্তমানে পানি যে লেভেলে আছে, মূল হাওরের জমিগুলো এরচেয়ে আরও ১ মিটার ওপরে রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বারত দিয়ে তিনি আরও বলেন, গতকাল সারারাত একটু একটু করে পানি বেড়েছে। আজকে থেকে এটা স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি হলে পানি আরও বেড়ে যাবে। এতে হাওরের ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪শ ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, হাওরের কৃষকদের সাথে আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। যে সমস্ত জমির ধান ৮০ ভাগ পেকেছে সে সকল জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য কৃষকদেরকে বলা হয়েছে। আবারও যদি বৃষ্টি হয় তবে বিভিন্ন হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃষকদেরকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসকে রাসেল/আরআই