ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

শনিবার (৯ এপ্রিল) ভোর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমীর স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এ কারণে লাঙ্গলবন্দ সেতুর দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের পরও মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা আমির হোসেন সকাল ১০টায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাসে ওঠেন। বিকেল ৪টায় সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় পৌঁছান তিনি। তিনি জানান, তার দুই সন্তান ও স্ত্রী যানজটে আটকা পড়ে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাইওয়ে পুলিশের অদক্ষতার কারণে তাদের এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

শুক্রবার রাতে লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপমুক্তির বাসনায় স্নানোৎসবে যোগ দিতে পুণ্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এসে ভিড় জমান। রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট না থাকলেও শনিবার ভোর ৫টা থেকে পুণ্যার্থীদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কের দুই পাশে গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পয়ে যানজট তৈরি হয়।

সন্ধ্যা নাগাদ যানজটের দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে।

স্নানোৎসবে আসা কয়েকজন পুণ্যার্থী জানান, মহামারির কারণে দুই বছর উৎসবটি বন্ধ ছিল। গতকাল শুক্রবার রাত থেকে এবারের স্নানোৎসব শুরু হয়েছে। আজ (৯ এপ্রিল) রাত ১১টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে উৎসব শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে যানজটে বসে কাহিল হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী। এদের মধ্যে সকালে আসা অনেক পুণ্যার্থীও আছেন।

মহাসড়কের জট ছড়িয়ে পড়েছে আশাপশের আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও। ভোর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন অনেক স্থানীয় মানুষও।

দীর্ঘ সময়জুড়ে যানজটে আটকে থাকায় বিভিন্ন পরিবহনের শতাধিক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক শিশু গরমে ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

ঢাকার সাভার থেকে আসা অণিকা রানী দাস নামে এক পুণ্যার্থী বলেন, ‘অন্য কোনো বছর এত দুর্ভোগ হয়নি। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের চালক শহীদুল ইসলাম জানান, সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে চার ঘণ্টায় মদনপুর এসেছেন তিনি। যানজট না থাকলে ৩০ মিনিটে এখানে আসা যায় বলে জানান তিনি।

কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা গাজীপুরগামী ট্রাকচালক কামাল হোসেন জানান, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ভবেরচর থেকে যানজট শুরু হয়েছে। দুই ঘণ্টায় সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় এসে পৌঁছেছেন তিনি। কখন গাজীপুর যেতে পারবেন, জানেন না।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, সকাল থেকে মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে পুলিশ তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।

শেখ ফরিদ/এনএ/জেএস