শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে আমেনাকে

২২ বছরের তরুণী আমেনা বেগম। অল্প বয়সেই বিয়ে হয় তার। বিয়ের পরপরই কোল আলো করে আসে সন্তান। সুখে-শান্তিতেই চলছিল আমেনার সংসার। হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। এখন শিকলে বাঁধা পড়েছে আমেনা বেগমের জীবন। মানসিক ভারসাম্য না থাকায় কাউকে কিছু বলতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দিনমজুর আব্দুল বাছেদের মেয়ে আমেনা। ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সরকত আলীর ছেলে হান্নানের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের একটি ছয় মাস বয়সী শিশু সন্তান রয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় আমেনার স্বামীও এখন খোঁজখবর রাখেন না। বর্তমানে আর্থিক অসচ্ছলতায় থেমে আছে তার চিকিৎসা।  

আমেনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জানালার শিকের সাথে শিকলে বাঁধা অবস্থায় বসে আছেন আমেনা বেগম। টাইফয়েড জ্বরে থমকে গেছে তার জীবন। 

আমেনার বাবা আব্দুল বাছেদ জানান, আমেনাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে গেছে। মানসিক ভারসাম্য না থাকায় প্রতিবেশীদের ক্ষতির আশঙ্কায় শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা চরের মুখ্য-সুখ্য মানুষ। কামলা দিয়ে সংসার চালাই। আমার চার মেয়ে দুই ছেলে। এর মধ্যে আমিনা মেজো। আমিনাসহ দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা ছোট। বর্তমানে তাদেরকে নিয়ে অন্যের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছি। কয়েকমাস আগে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে আমার পালন করা কয়েকটি ছাগল মেঘনায় ভেসে গেছে। স্বপ্ন ছিল এই ছাগলগুলো বিক্রি করে আমিনাকে সুস্থ করে তুলবো। আর এই স্বপ্নও পূরণ হলো না।

আব্দুল বাছেদ জানান, তিন বছর আগে আমিনা টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে চিকিৎসায় ভালোও হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই আমেনা পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বরিশালের একটি হাসপাতালে নিয়ে তার চিকিৎসা করানো হয়। কিছুদিন ভালো থাকার পর আবারও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে আমেনা। বর্তমানে আর্থিক কারণে তার চিকিৎসা বন্ধ আছে। আমেনার ছয় মাস বয়সী শিশু সন্তানও মায়ের যত্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিশুটিও সপ্তাহখানেক পরপর সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 

আব্দুল বাছেদ বলেন, মানুষের কাছে শুনেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুব দয়ালু। আমাদের সংসারের কথা যদি ওনাকে জানাইতেন, তয় আমাদের কোনো দুঃখ থাকতো না।  

চরখলিফা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন ধরেই মেয়েটি কষ্টে জীবনযাপন করছে। মাঝে মধ্যে আমরা চেষ্টা করি সাহায্য করতে। কিন্তু আমাদের সাহায্য সামান্য। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থা হতো।  

দৌলতখান উপ‌জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আনিসুর রহমান জানান, আমেনাকে কোনো মানসিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হোসেন বলেন, খোঁজ নিয়ে মেয়েটিকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। অসহায়দের সাহায্যে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। 

রাকিব উদ্দিন অমি/আরএআর