নিহত জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়া

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাবার কোলে থাকা শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়া (৪) নিহতের ঘটনায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে নিহত তাসপিয়ার চাচা হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এ ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মামলার ‘গোপনীয়তা’র কথা বলে আসামিদের নাম প্রকাশ করছে না পুলিশ।

বেগমগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি ঢাকা পোস্টকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

তিনি বলেন, ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে নিহত শিশুর চাচা মামলাটি দায়ের করেছেন। আমরা তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাবার কোলে থাকা জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়া নামে এক শিশু নিহত হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন শিশুটির বাবা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব হাজিপুর গ্রামের রাশেদ মিয়ার বাড়ির আলম মিয়া পাশের দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার কাছে মাটি বিক্রি করেন। কিন্তু বাদশা চুক্তির চেয়ে অতিরিক্ত মাটি কেটে নিতে চাইলে গত দুই দিন ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ঝগড়া হয়। 

এ নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে নিহত তাসপিয়ার বাবা আবু জাহেরও ছিলেন বলে জানা গেছে।

একপর্যায়ে বুধবার বিকেলে বাদশা মিয়া তার এলাকার রিমনসহ ৪-৫ জন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে এসেই এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে একটি দোকানে থাকা প্রবাসী জাহের ও তার মেয়েকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এসময় সন্ত্রাসীরা আবু জাহেরকে বলে, ‘তুই বৈঠকে ছিলি... ’ এই বলেই বাবা-মেয়ের ওপর হামলা করে তারা। তারা পালিয়ে যেতে চাইলে ইট নিক্ষেপ করে শিশু তাসপিয়ার মাথা ফাটিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এরপরও দোকানদারের সহায়তায় আবু জাহের মেয়েকে নিয়ে বাড়ির দিকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে তাদের ধাওয়া করে গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে তাসপিয়া ও তারা বাবা ‍দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ঢাকা নেওয়ার পথে রাত ৮টার দিকে শিশু তাসপিয়ার মৃত্যু হয়।

তাসপিয়ার বাবা আবু জাহের সন্ত্রাসীদের গুলিতে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। মেয়ের মৃত্যু হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি।

হাসিব আল আমিন/আরএআর/জেএস