নানা আয়োজনে দেশজুড়ে বর্ষবরণ
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে সারাদেশের বর্ষবরণের চিত্র তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
রংপুর
বিজ্ঞাপন
ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে বিভেদ ভুলে সারাদেশের মতো রংপুরেও বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষবরণ।
সকাল ১০টায় টাউন হল চত্বর থেকে রংপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ অংশ নেওয়া বিভিন্ন বয়সী মানুষের উচ্ছ্বাস আর বাহারি পোশাক পরিধান, নাচ-গান, হইহুল্লোড়ে তৈরি হয় অন্যরকম আমেজ। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিলা স্কুল মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
বিজ্ঞাপন
পরে বৈশাখী বটতলা মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই রংপুরবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মেহেদুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।
খুলনা
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে খুলনায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মো. মাহাবুব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়।
সিরাজগঞ্জ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর নানা আয়োজনে আবারও বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে সিরাজগঞ্জবাসী। আজ সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে থেকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের সমন্বয়ে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানে গানে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ্য সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ড. কে এম হোসেন আলী হাসান, সহসভাপতি আবু ইউসুফ সুর্য্য, অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস, ইসহাক আলী, পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মনির হোসেন, সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন রামপদ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি ফারহানা ইয়াসমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল মতিন মুক্তা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলামসহ নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পটুয়াখালী
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পটুয়াখালীতে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ পালিত হয়েছে। দুই বছর পর শত শত মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ সকাল ৮টায় শহরের পিডিএস মাঠ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডিসি মঞ্চ মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা হেলান, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর, জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতান আহমদ মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আবদুল মান্নান, পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
বাগেরহাট
দুই বছরের দুঃখ ভুলে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে (১৪২৯) বরণ করে নিয়েছে বাগেরহাটবাসী। আজ সকাল ১০টায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈশাখী গানের মাধ্যমে বর্ষ বরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ মিনারের সামনে থেকে মঙ্গলশোভা যাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রা শেষে অডিটোরিয়াম চত্বরে ৭ দিনব্যাপি বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মো. রিজাউল করিম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাফিজ আল আসাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমান, বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুছাব্বেরুল ইসলাম প্রমুখ।
কিশোরগঞ্জ
দীর্ঘ দুই বছর পর আবারও বাংলা বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে কিশোরগঞ্জবাসী। আজ সকাল ১০টায় শহরের পুরাতন স্টেডিয়াম থেকে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। পরে তা শহর প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোটে এম এ আফজ, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. আবদুল মান্নান প্রমুখ।
মাগুরা
বাশির সুর আর ঢোলের বাদ্যের তালে তালে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলার ছন্দে নেচে-গেয়ে বাংলা নববর্ষ পালন করল মাগুরাবাসী। বিকেল ৪টায় মাগুরা নোমানী ময়দানে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়।
সাঁইত্রিশ লাঠিয়াল দল এবং গোপালগ্রাম লাঠিয়াল দল নামে দুটি শক্তিশালী দল এই খেলায় অংশগ্রহণ করে। এ সময় হাজারো দর্শক খেলা উপভোগ করতে ভিড় জমান ময়দানে। সাঁইত্রিশ লাঠিয়াল দলের মহিলা সদস্য মালা খাতুনের লাঠি খেলার নৈপুণ্য এ সময় দর্শকদের নজর কাড়ে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নানা বয়সী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
বান্দরবান
বর্ণাঢ্য আয়োজনে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা পরিষদের কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে নারী-পুরুষ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নানা সাজে সেজে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
সকালে বেলুন উড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্ধোধন করেন অনুষ্টানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির সভাপতিত্বে উক্ত শোভাযাত্রায় পুলিশ সুপার জেরিন আখতার, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাওছার হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দীসহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নেত্রকোণা
সারাদেশের মতো হাওরাঞ্চল নেত্রকোনাতেও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ জেলা প্রশাসন শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার মুক্তমঞ্চে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আব্দুর রহমান, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়, পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলার সাংস্কৃতিককর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
নানা আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯। আয়োজনে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা। এ ছাড়া বৈশাখী শোভাযাত্রা, মোরগ লড়াই, বউচি খেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখর ছিল চবি ক্যাম্পাস।
সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষ উদযাপন। বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত মঞ্চে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় সংগীতের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সাদামাটা আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উদযাপিত হয়েছে বাংলা নতুন বর্ষবরণ। আজ বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষবরণের এই আয়োজন।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও মূল আয়োজক ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ। 'খেরোখাতায় আঁকবোরে আজ, শিল্পী মনের কথা। রঙ ছাড়িয়ে রাঙাবো আজ, আমাদের হালখাতা' এই প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে এ বছর উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম, সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।
আরআই