করিম উদ্দিন ভরসার দ্বিতীয় ছেলে শফিকুল ইসলাম ভরসা

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সত্ত্বেও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য করিম উদ্দিন ভরসাকে রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করেননি তার দুই ছেলে। এনিয়ে করিম উদ্দিন ভরসার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুই দফায় আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে তাকে রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু নির্ধারিত দুই ঘণ্টায় আদালতপাড়ায় সাবেক সংসদ সদস্য করিম উদ্দিন ভরসাকে দেখা যায়নি।

প্রায় ৮৮ বছর বয়সী এই শিল্পপতির বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তার অপর নয় সন্তান। তাদের ‘হেবিয়াস কর্পাস’ আবেদনের প্রেক্ষিতে রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে করিম উদ্দিন ভরসাকে হাজির করার আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। 

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে সাইফুল উদ্দিন ওরফে শিমুল ভরসা নিজ জিম্মায় নিয়ে করিম উদ্দিন ভরসাকে বেআইনিভাবে আটক রেখেছেন বলে ‘হেবিয়াস কর্পাস’ অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম ভরসা, কামরুল ইসলাম ভরসা, জোসনা আরা বেগমসহ ৯ সন্তান। করিম উদ্দিন ভরসার নয় সন্তানের করা ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

ছেলে সাইফুল উদ্দিন ভরসার হেফাজতে করিম উদ্দিন ভরসাকে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূতভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিতে আদালতের সামনে তাকে হাজির করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে করিম উদ্দিন ভরসাকে আবেদনকারীদের (৯ সন্তান) যৌথ নিরাপদ হেফাজতে কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার করিম উদ্দিন ভরসার ছেলে সাইফুল উদ্দিন ভরসা, রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি ও গুলশান থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। আদেশে ওই দিনই সাইফুল উদ্দিন ভরসার ওপর ৬ মার্চ করিম উদ্দিন ভরসাকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ আপিল আবেদন করলে সুপ্রিম কোর্ট ছয় সপ্তাহের জন্য ওই আদেশ স্থগিত করেন। ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে শফিকুল ইসলাম ভরসাসহ নয় সন্তান ফের আবেদন করলে করিম উদ্দিন ভরসাকে হাজির করে এক সপ্তাহ পর পর প্রতি শনিবার অপর ছেলে-মেয়েদের দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য রংপুরের জেলা ও দায়রা আদালতকে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।

সে অনুযায়ী গত ২ এপ্রিল করিম উদ্দিন ভরসাকে রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করার কথা থাকলেও সেদিনও আদালতে করিম ভরসাকে হাজির করেননি তার দুই ছেলে। তখন রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত আবারও ১৬ এপ্রিল করিম উদ্দিন ভরসাকে হাজির করার দিন ধার্য করেন। কিন্তু শনিবার (১৬ এপ্রিল) তাকে হাজির করা হয়নি।

আদালতে বাবা করিম উদ্দিন ভরসাকে দেখতে এসেছিলেন দ্বিতীয় ছেলে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভরসা। কিন্তু তার দুই ভাই সিরাজুল ইসলাম ভরসা এবং সাইফুল ইসলাম শিমুল ভরসা তাদের জিম্মায় থাকা করিম উদ্দিন ভরসাকে হাজির না করায় হতাশ হন শফিকুল ভরসাসহ অন্য সন্তানরা। 

শফিকুল ভরসা জানান, বিচারক আবারও তাদের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্পত্তির লোভে তার দুই ভাই তাদের পিতাকে জিম্মায় নিয়ে কৌশলে জিম্মি করে রেখেছেন। তাদের বাবা করিম উদ্দিন ভরসা বেঁচে আছেন কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন সবাই। এ ব্যপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

তিনি বলেন, আমার বাবা তিন তিনবারের এমপি, একজন জননেতা। জনপ্রিয় নেতা। উনার মতো একজন ব্যক্তির দেখা পেতে আমরা সন্তানেরা আইনের দ্বারস্থ হয়েও দেখা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এটা সন্তান হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। তিনি জীবিত আছেন নাকি মৃত, নাকি অসুস্থ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছি। 

প্রসঙ্গত, করিম উদ্দিন ভরসার দুই স্ত্রীর ঘরে ১৬ সন্তান আছেন। মামলার প্রেক্ষিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর রংপুর আদালতের এক আদেশে করিম উদ্দিন ভরসাকে তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান সাইফুল উদ্দিন ভরসার জিম্মায় দেওয়া হয়। এরপর তার সঙ্গে আর দেখা করতে পারছেন না অপর সন্তানরা।

আট মাস ধরে তারা তাদের বাবার খোঁজও জানতে পারছেন না। এখন যার জিম্মায় আছে সেই ছেলে সাইফুল উদ্দিন ভরসা ও বড় ছেলে সিরাজুল ইসলাম ভরসার বিরুদ্ধে তাদের বাবা করিম উদ্দিন ভরসা বাদী হয়ে ২০১৭ সালে হত্যাচেষ্টা, হুমকি ও মারপিট করার অভিযোগে মামলা করেছিলেন (মামলা নং সিআর-৬২১/১৭)। এই মামলার পর সাইফুল ও সিরাজুল ভরসা বাদী হয়ে গত ৩০-১১-২০১৭ তারিথে রংপুর জজ আদালতের কাউনিয়া সহকারী জজ আদালতে করিম উদ্দিন ভরসাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ডিক্রির জন্য একটি মামলা দায়ের করেন। 

করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর