পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় জন্মের পর এক কিশোরীর নবজাতক ছেলে চুরি হয়েছে। তারপর পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ। গেল ১৩ এপ্রিল দুপুরে সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ওই কিশোরী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ছেলেসন্তান জন্ম দেয়। তারপর থেকে নবজাতককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পাঁচ দিন ধরে সন্তান ছাড়া মা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছে।

নবজাতক উধাও হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের একটি দল রোববার (১৭ এপ্রিল) মধ্যরাতে ক্লিনিকে গিয়ে ক্লিনিকের মালিক ও কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য পাওয়া গেছে, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন বোদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস।

পুলিশ, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জানান, গেল ১৩ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার নিরাময় নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওই কিশোরী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ছেলেসন্তান জন্ম দেয়। বয়সে ভুল তথ্য, ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ওই কিশোরীর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে স্বামীর নাম ব্যবহার করলেও গত পাঁচ দিনেও তার স্বামী একবারও দেখতে যাননি ক্লিনিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার মা-বাবাকেও ক্লিনিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনোয়ারা নামে কথিত খালা নামে পরিচয় দিয়ে এক নারী ওই কিশোরীকে ক্লিনিকে ভর্তি করান। ক্লিনিকে ভর্তির এক ঘণ্টা পর কিশোরীকে অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসক ডা. আনোয়ার আলী ও উত্তম কুমার পান্ডে তার অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন। এর পরপরই নবজাতককে চিকিৎসার কথা বলে ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে যান কিশোরীর খালা। এরপর থেকে ওই নবজাতক নিখোঁজ রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নবজাতককে ৪০ হাজার টাকায় নীলফামারীর এক জনৈক নারীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ গর্ভপাত ঘটানো ও শিশু বিক্রি চক্রের সদস্যরা ক্লিনিক মালিককে ম্যানেজ করে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

সরেজমিনে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রকৃত ঘটনা জানতে ক্লিনিকে কিশোরী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। কিন্তু ক্লিনিকের মালিক উজ্জ্বল সরকার সাংবাদিকদের বাধা দেন। পরে বিষয়টি বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরীকে অবহিত করেন তারা। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন।

চিকিৎসাধীন কিশোরী জানায়, তার অজান্তেই ক্লিনিকে ভর্তির সময় স্বামী ও ঠিকানা ভুল লিখে দেওয়া হয়েছিল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই কিশোরী আরও জানায়, ক্লিনিকে তার পাশে কেউ নেই। চার দিন ধরে সন্তানকে দেখতে পায়নি। দূর সম্পর্কের মনোয়ারা খালা তার সন্তানকে নিয়ে যেতে পারেন। তবে ওই কিশোরী তার নবজাতক ছেলেকে তার কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে নিরাময় নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক উজ্জ্বল সরকার বলেন, নবজাতকের চিকিৎসার কথা বলে ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে যান ওই কিশোরীর খালা। পরে শুনেছি ওই নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমরা নবজাতককে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। নবজাতকটি এখন নীলফামারী জেলায় রয়েছে। ক্লিনিকের এক কর্মচারী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নীলফামারী গেছে। তাকে দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাবে, এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সবকিছু গোপন করার পরও কেন অস্ত্রোপচার করালেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে উজ্জ্বল সরকার বলেন, তার নিকটস্থ আত্মীয়রা তাকে ভর্তি করেছে। সেখানে তারা যে বয়স ও ঠিকানা দিয়েছিল, তা-ই উল্লেখ করা হয়েছে। রোগীর গাইনি সমস্যা থাকায় দ্রুত অপারেশন করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনা কী, তা আমার জানার প্রয়োজন নেই।

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ক্লিনিকে পুলিশ পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে ক্লিনিক মালিক ও কিশোরীকে জিজ্ঞাবাদ করা হয়েছে। নবজাতক উদ্ধারসহ প্রকৃত কারণ না জানিয়ে কিশোরীকে ছাড়পত্র না দিতে ক্লিনিক মালিককে বলে দেওয়া হয়েছে।

মো. রনি মিয়াজী/এনএ