নেত্রকোণার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার হাওরগুলোতে ৪০ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়।

ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোণার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। ফলে হাওরজুড়ে কৃষকদের কষ্টের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রথম দফায় জেলার খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার কয়েকটি হাওরের নিচু এলাকার ৫০০ একর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কৃষক তাদের হাওরের ফসল ঘরে তোলার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকরা একদিকে যেমন দিন-রাত পরিশ্রম করে ফসল রক্ষা বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন ও মেরামত করছেন, অন্যদিকে তেমনি হাওরের পাকা ও আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। লড়াই-সংগ্রাম করে কৃষকরা ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ করেছেন। তবে হাওরের অবশিষ্ট ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন কৃষকরা।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফএম মোবারক আলী বলেন, আজ পর্যন্ত হাওরাঞ্চলের ৭০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে এবং যেসব ধান এখনো কাটার বাকি আছে তা ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। তবে সপ্তাহখানেক সময় পেলে কৃষকরা শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবে বলে আশা করছি।

খালিয়াজুরীর চাকুয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল মিয়া বলেন, বাঁধ রক্ষা করব নাকি হাওরের ফসল রক্ষা করব ভেবে পাচ্ছি না। তাই এক দিকে বাঁধ পাহারা দিচ্ছি, পাশাপাশি হাওরের কাঁচা ও আধা পাকা ধান কাটছি। তবে যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে কীর্তনখোলা বাঁধটি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।

একই এলাকার কৃষক মৃদৃল মিয়া বলেন, আমরা ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছিলাম। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের সব ধান কাটা শেষ হলেও ব্রি-২৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান পুরোপুরি পাকেনি। এসব ধান নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। তবে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ার ভয়ে অনেকেই জমির কাঁচা ও আধা পাকা ধান কেটে ফেলছে।

এদিকে দ্বিতীয় দফায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাওরাঞ্চলের প্রধান নদী ধনুর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়ছে জেলার সোমেশ্বরী, কংস ও মগড়াসহ অন্য নদীগুলোরও।

আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলার খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান।

এ ছাড়া গত কয়েকদিন ধরে টানা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ধনু নদী সংলগ্ন কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধটি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় যেকোনো মুহূর্তে কীর্তনখোলা ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বাঁধ সংলগ্ন হাওরে পানি ঢুকে বারো হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা। 

বাঁধে ফাটল ও ধস দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কৃষকদের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বাঁধ মেরামত করলেও হাওরের বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে আশঙ্কা যেন কিছুতেই কাটছে না। তাই তারা ফসল হারানোর ভয়ে যে যেমন পারছে অবশিষ্ট কাঁচা ও আধা পাকা ধানই কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নিশ্চিত করে বলেন, আমরা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে দিন-রাত বাঁধে অবস্থান করছি এবং ধস ও ফাটল দেখা মাত্রই তা মেরামত করে বাঁধটিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

জিয়াউর রহমান/আরআই