নওগাঁর পত্নীতলায় সদ্য বিলুপ্ত জেলা পরিষদের সদস্য ফাতেমা জিন্না ঝর্ণার বাড়ি থেকে কোভিড-১৯ দুস্থদের জন্য বরাদ্দের ১৯৪ বস্তা ত্রাণসামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে উপজেলা সদরের নজিপুর উচ্চবিদ্যালয়-সংলগ্ন তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন।

গত ১৭ এপ্রিল (রোববার) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ আইন ২০০০-এর ধারা ৫ অনুযায়ী (সংশোধনী আইন ২০২২ অনুযায়ী) দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় উক্ত পরিষদসমূহ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে মোতাবেক জেলা পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ার পর আর কেউ জেলা পরিষদের সদস্য বলবৎ থাকেন না।

জানা যায়, কোভিড-১৯ চলতি বছরের মার্চে ত্রাণসামগ্রী রমজান মাসে দুস্থদের মাঝে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। হঠাৎ জেলা পরিষদ বিলুপ্তি ঘোষণা করে। এ জন্য তড়িঘড়ি করে জেলা পরিষদ থেকে সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য পত্নীতলা উপজেলার বাসিন্দা সদ্য বিলুপ্ত জেলা পরিষদের দুই সদস্য ফাতেমা জিন্না ও শাহীন চৌধুরীর ১৯৪ বস্তা ত্রাণসামগ্রী উত্তোলন করেন। পরে সেগুলো ফাতেমা তার বাড়িতে মজুত করেন।

গতকাল সোমবার রাতে সাবেক সদস্য ফাতেমার বাড়িতে জেলা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালান পত্নীতলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল ইসলাম। পরে আজ মঙ্গলবার ভোরে ত্রাণগুলো জিম্মায় নিয়ে পত্নীতলা ডাকবাংলোতে রাখা হয়। এ সময় ত্রাণসামগ্রী নিজ বাড়িতে রাখার অপরাধে ভুল স্বীকার করায় ফাতেমা ও শাহীনের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। পরে সুনির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত করে দুস্থদের মাঝে ত্রাণগুলো বিতরণ করার দায়িত্ব নেয় উপজেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে ফাতেমা জিন্না বলেন, সোমবার জেলা পরিষদ থেকে ত্রাণগুলো পত্নীতলায় নিয়ে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমার বরাদ্দ ছিল ১০০ প্যাকেট (বস্তা)। প্রতি বস্তায় ছিল চাল, ছোলা, মশুর ডাল, সয়াবিন, সাবান ও চিনি। যেহেতু এলাকায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়, এ জন্য আমার এবং আরেক সদস্য শাহীন চৌধুরীর বরাদ্দও আমার বাড়িতে রাখা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়। পরে মাস্টাররোল করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ নিয়ে ত্রাণগুলো বিতরণ করা হবে। কিন্তু রাতেই গোয়েন্দা সংস্থা মালগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে রাত হওয়ার কারণে সরকারি গুদামে না রেখে বাড়িতে ত্রাণের মালগুলো রেখেছিলাম। এখানে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

পত্নীতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গাফ্ফার বলেন, জেলা পরিষদ থেকে প্রতি সদস্যকে ত্রাণগুলো দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। ত্রাণগুলো তালিকা করে মাস্টাররোলের মাধ্যমে বিতরণ করার কথা ছিল।

পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন সরকার বলেন, গত রোববার জেলা পরিষদকে বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। সোমবার তারা জেলা পরিষদ থেকে ত্রাণগুলো উত্তোলন করেন। পরে ত্রাণগুলো সরকারি গুদামে বা ডাক বাংলোতে না রেখে বাড়িতে রাখেন। অভিযানের সময় বিষয়টি আমাকে অবগত করা হয় যে রমজান মাসে ত্রাণগুলো বিতরণ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ত্রাণগুলো উদ্ধার করে ডাকবাংলোতে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তালিকা করে ত্রাণগুলো বিতরণ করা হবে।

মো. দেলোয়ার হোসেন/এনএ