যশোর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে কাজল মন্ডল। ছেলের মেডিকেলে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান চৌগাছা উপজেলার রাণীয়ালি গ্রামের সুধাংশু কুমার মন্ডল ও রেবা রানী মন্ডল দম্পতি। 

কাজলের পরিবারের দারিদ্রতা ও তার পড়াশোনার অনিশ্চিয়তার বিষয়টি জানতে পারেন চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। তিনি শনিবার কাজল মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের মিষ্টিমুখ করান। একই সঙ্গে তার পড়াশোনার খরচ বহনের ঘোষণা দেন।

এ সময় কাজলের মা রেবা রানী মন্ডল আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা কাজলের মায়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে তাকে কোনো অবস্থাতেই মনোবল না হারাতে বলেন।

তিনি কাজলদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেন এবং তার ভর্তির খরচ নিজে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের মোবাইল নম্বর কাজলের মায়ের কাছে দিয়ে যে কোনো প্রয়োজনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজলের লেখাপড়ার সকল বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে বলে ঘোষণা দেন। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কাজল মন্ডল উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রাণিয়ালী গ্রামের সুধাংশু কুমার মন্ডলের ছেলে। 

তারা দু’ভাই বোন। বড় বোন ঝিনাইদহের কেসি কলেজে অনার্স তৃতীয়বর্ষে অধ্যয়নরত। রেবা রানী মন্ডল জানান, তাদের সামান্য ভিটেবাড়িটুকুই আছে। আর কোনো জমি নেই। কাজলের বাবা পরের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। একটি পাটখড়ির দেয়ালে টিনের ছাউনি দেয়া ঝুপড়ি ঘরে তারা বসবাস করেন।

কাজল মন্ডল জানান, ২০১৯ সালে গ্রামের রাণিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শত অভাবের পরও যশোর সরকারি সিটি কলেজে তাকে ভর্তি করে তার পরিবার। সেখানে একটি ছোট বাসা ভাড়া নেয়া হয়। কাজলের মা রেবা রাণি শহরে ছেলেকে রান্না করে দেয়ার জন্য সেখানে থেকে শহরের বিত্তবানদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে ছেলের ঘর ভাড়া ও কোচিংয়ের খরচ যোগান দেন। 

অন্যদিকে বাবা সুধাংশু বাড়িতে দুই বছর একা পরের খেতে কাজ শেষে ফিরে রান্না করে খেয়েছেন এবং ঝিনাইদহের কেসি কলেজে পড়ুয়া মেয়ের খরচ যুগিয়েছেন।

সুধাংশু মন্ডল বলেন, আমার দুই সন্তানই ছোটবেলা থেকে মেধাবী হওয়ায় স্ত্রী রেবার উৎসাহে শত অভাবের মধ্যেও ওদের লেখাপড়া বাদ দিতে বলিনি। স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। গ্রামের মেম্বার (ইউপি সদস্য) গোবিন্দ কুমার কাজলের এসএসসির ফরম পূরণের সকল খরচ বহন করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান অবাইদুল ইসলাম সবুজ যথাসাধ্য পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন।

শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মিষ্টি নিয়ে তার বাড়িতে গেলে কাজলের মা রেবা রানী মন্ডল বারবার আপ্লুত হয়ে কেঁদেছেন। এ সময় কাজলে অন্যের খেতে কাজ করছিলেন। কাজলের মা রেবা মন্ডল ইউএনওকে বলেন, অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখন আপনারা একটু সহযোগিতা করলে.... বলতে বলতে আবারও কেঁদে ফেলেন। 

এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে সাহস দিয়ে বলেন, কোনো অবস্থাতেই ভেঙে পড়বেন না। আমিসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসন আপনার পাশে আছে। আপনি একজন রত্নগর্ভা মা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, অদম্য মেধাবী কাজলের পাশে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন ও যশোর জেলা প্রশাসন সবসময় থাকবে। জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। কাজলের ভর্তির টাকা আমি নিজে দেব। তার লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, কাজলদের জীর্ণকুঠির দেখেছি। কাজলের বাবা মাকে সরকারি একটি বাড়ি দেয়া যায় কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
 
জাহিদ হাসান/এমএএস