অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে তিন রাত লঞ্চে, সব হারালেন প্রকৌশলী
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে টানা তিন রাত এমভি মানামী লঞ্চে পড়ে থাকলেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কোনো সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে শনিবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টা ৩৩ মিনিটে বরিশাল নদী বন্দরে স্বেচ্ছাসেবী ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।
এমন তথ্য জানিয়েছেন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া যুবকের স্ত্রী কামরুন্নাহার। রোববার (১ এপ্রিল) বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ঢাকা পোস্টের কাছে তিনি এমনটি দাবি করেন।
বিজ্ঞাপন
অসুস্থ ওই যুবকের নাম আল আমিন। তিনি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া এলাকার আব্দুল বারেক হাওলাদারের ছেলে। পেশায় ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের সহকারি রেজিস্ট্রার শামসুদ্দোহা তৌহিদ বলেন, আল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে শনিবার দিবাগত শেষ রাতে অচেতন অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি এখনো সংজ্ঞাহীন। আমরা তাকে গুরুত্বসহকারে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
লঞ্চে সেবাদানকারী আরিফুর বলেন, নিচতলার ডেকে আমরা তাকে (আল আমিন) অচেতন অবস্থায় পেয়েছি। জানি না কি হয়েছে বা তিনি কোথা থেকে এসেছেন। মানবিক দিক থেকে মানুষটির পাশে দাঁড়িয়েছি। লঞ্চ থেকে নামার সময়ে আমাদের সাথে মানামী লঞ্চের স্টাফরা খারাপ ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, আল আমিন সাহেবের কাছে একটি কাগজে মোবাইল নাম্বার লেখা পাই। সেটিতে কল করার পরে এক নারী রিসিভ করেন। কথা বলে জানতে পারি তিনি তার স্ত্রী। বিষয়টি শনিবার রাতেই তাকে জানাই।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আল আমিনের স্ত্রী কামরুন্নাহার জানান, আমার স্বামী গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে উঠে আমাকে কল করেছিল। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। শুক্রবার সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়েছি। শনিবার রাতে থানায় জিডি করতে চেয়েছিলাম। এর আগেই রাত ১০টার দিকে এক লোক আমার মোবাইলে কল করে আল আমিনের বিষয়ে জানায়।
কামরুন্নাহার বলেন, আমাকে জানিয়েছে তার সাথে ৫৫ হাজার টাকা ছিল। দুটি মোবাইল ছিল। আর আমাদের জন্য ঈদের নতুন পোশাক ছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার লঞ্চে ওঠার পর তার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। শনিবার রাতে লঞ্চঘাটে ছাত্রলীগের লোকেরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। তার মানে যদি সে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে থাকে তাহলে তিন রাত ওই লঞ্চেই পড়ে ছিল। অথচ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার ধারণা লঞ্চের লোকজনও অজ্ঞান পার্টির সাথে জড়িত।
এমভি মানামী লঞ্চের বরিশাল অফিস ব্যবস্থাপক রেজোয়ান হোসেন লিপন দাবি করেন, এ ধরনের কোনো তথ্য তারা জানেন না।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে এক যাত্রীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একটা লঞ্চে একজন যাত্রী তিন রাত ও দুই দিন পড়ে ছিল, আর সেটা লঞ্চের স্টাফরা খেয়াল করেনি, এটা হতে পারে না। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, মাননীয় মেয়র মহোদয়ের উদ্যোগে অসুস্থ ওই যুবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই