হাদিসুরের মা আমেনা বেগম

‘ঈদে সবাই কত খুশিতে থাকে, চাকরিতে থাকা সন্তানেরা বাড়িতে আসে। কিন্তু আমার বাবায় তো আর আইবে না, হে তো চিরদিনের লাইগ্গা ঘুমাইয়া পড়ছে। এবার আমাগো কোনো ঈদ নাই, ঈদ মইরা গেছে।’

ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মা আমেনা বেগম এক বুক দুঃখ নিয়ে বলছিলেন এসব কথা। 

নিহত হাদিসুর রহমান বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আবদুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে। চার ভাই-বোনের মধ্যে হাদিসুর দ্বিতীয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন হাদিসুর। তাকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে গোটা পরিবার।

হাদিসুরের মা আমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বাবায় (হাদিসুর) প্রত্যেক ঈদে আমাগো লাইগ্গা নতুন পোশাক, শাড়ি লইয়া আইতো। এবার তো বাবায় নাই, কে এহন আমাগো দেখবে! আমরা কারে লইয়া থাকমু, কার ঈদের বাজারের লাইগ্গা বইয়া থাকমু।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাদিসুর আছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ওর দুই ভাইয়ের লেখাপড়া ওই চালাইতো। এহন সবকিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে পইড়া গেছে। আমার মেজো পোলারে চাকরি দেওয়ার কথা আছিলো, তয় এহন পর্যন্ত কোনো খবর নাই। মেজো পোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা চাকরি চাই আমি।’

হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, ‘বাবা চাকরি থেকে অবসরে আসার পর থেকে ভাইয়াই আমাদের পরিবারের হাল ধরেছিল। এখন ভাইয়া না থাকায় আমরা আর্থিক সংকটের মধ্যে আছি। আমাদের আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কাছে লিখিত আবেদন করেছি কয়েকবার। কিন্তু কোনো উত্তর আসছে না। মা-বাবার চিকিৎসাসহ আমাদের লেখাপড়া যাতে চালিয়ে যেতে পারি, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আশা করছি।’

প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ রাতে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলা চালায় রুশ সেনারা। এ হামলায় জাহাজের প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আরিফ (৩৪) নিহত হন। পরদিন ৩ মার্চ সন্ধ্যায় অক্ষত ২৮ নাবিক এবং হাদিসুরের মরদেহ ইউক্রেনের একটি বাংকারে নেওয়া হয়। সেখানে হাদিসুরের মরদেহ রেখে বাকি নাবিকদের নিরাপদে রোমানিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। গত ৯ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে তারা দেশে ফেরেন।

এরপর রকেট হামলায় নিহত প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আরিফের মরদেহ ১৪ মার্চ রাতে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে। পরদিন ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে নিজ বাড়িতে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। 

খান নাঈম/আরএআর