দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদের বার্তা। রাত পোহালেই ঈদ। জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটাও। এখন বাকি টুকিটাকি কিছু প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এর মধ্যে ঈদের দিনে পুরুষদের প্রয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ আঁতর, টুপি ও জায়নামাজ। আর সেজন্য ঈদের বাজারে এখন ভিড়টা বেশি দেখা যাচ্ছে আঁতর, টুপি, সুরমা, জায়নামাজের দোকানগুলোতে। ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছে বিক্রেতারা।

সোমবার (২ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর মহানগরীর বিপণি বিতান থেকে ছোট-বড় মার্কেটগুলোর পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে এই ভিড় দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে গভীর রাত পর্যন্ত এই কেনাকাটা চলবে।
 
নগরীর বিভিন্নস্থানে বিপণি বিতান ও ছোট-বড় মার্কেটগুলোর পাশে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা টুপি-সুরমা ও আঁতরের পসরা সাজিয়েছে। দেশি-বিদেশি সুগন্ধি আঁতর, সুরমা আর টুপি কেনার ভিড় দেখা গেছে নগরীর দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার শুরু থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত টুপি-আঁতরের মার্কেটে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। কিন্তু শেষ সময়ে এসে সেই ভিড় আরও বেড়েছে।

অভিজাত বিপণি বিতানগুলোর আউটলেট থেকে শুরু করে বেতপট্টি, সুপার মার্কেট, কমিউনিটি সুপার মার্কেট, জাহাজ কোম্পানি, পায়রা চত্ত্বর, সেন্ট্রাল রোডসহ নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আঁতর-টুপির দোকানগুলোতে বাহারি টুপি ও আঁতর কিনতে আসছেন নানা শ্রেণি-পেশার ক্রেতারা। ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য কেউ কিনে নিচ্ছেন জায়নামাজও।  

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে এসব সামগ্রী। সন্ধ্যার পর থেকে এর চাহিদা আরও বাড়বে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর রকমারি ডিজাইন আর নজরকাড়া মূল্যের টুপির পাশাপাশি দেশীয় টুপি বিক্রি হচ্ছে।

সরেজিমনে দেখা গেছে, ধনি-গরিব সব শ্রেণির মানুষ এখন আঁতর, টুপি ও প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ কেনাকাটায় ব্যস্ত। ফুটপাতে মাইকে চটকদার বিজ্ঞাপন বাজিয়ে আঁতর, গোলাপ, টুপি বিক্রি করছে। সব শ্রেণি-পেশার লোকজনকেই এসব ভাসমান দোকানগুলো ভিড় করতে দেখা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন মসজিদের সামনেও পসরা সাজিয়ে বসেছেন টুপি-আঁতর ও সুরমা বিক্রেতারা।

আকর্ষণীয় ডিজাইন আর নানা কারুকার্যে সুসজ্জিত টুপির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। দেশি টুপির পাশাপাশি বাহারি ডিজাইন আর আকৃতির বিদেশি টুপির কদর রয়েছে দোকানগুলোতে। হরেক রকম ডিজাউন আর দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে এসব টুপির চমকপ্রদ সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা।

বেতপট্টি রোডের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, কাজ ও মানভেদে এসব টুপি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে চীনা টুপি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০ থেকে ৬৫০, ভারতীয় টুপি ৮০ থেকে ৬০০ এবং দেশে তৈরি টুপি ৪০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার চীনের ওয়ানি টুপি ৬৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০, পাঠান ৪৫০ এবং ছোট পুঁতির সঙ্গে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া নেটের তৈরি চীনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করছে দোকানিরা।
 
বেতপট্টির এক টুপির দোকানি জানান, সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার ঊর্ধ্বে বিভিন্ন মূল্যে টুপি, আঁতর ও সুরমা কিনছেন ক্রেতারা। রমজানে শুরু ও শেষ দিকে টুপি বিক্রি ভাল হয়। এই সময়টাতে লাভও হয়।

আঁতর বিক্রেতা নূর ইসলাম বলেন, এখন দেশি কিছু আঁতর দাম কম হওয়ায় বেশি চলে। দেশি আঁতর ৫০ থেকে ২ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। তবে কিছু মানুষ আছেন যারা-উদ, কস্তুরিসহ বিশেষ ধরনের আঁতর পছন্দ করেন। দাম বেশি হওয়ায় এ ধরনের আঁতরের ক্রেতাও কম, বিক্রিও কম।
 
মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার পাশাপাশি রমজান, শবে বরাত, শবে মেরাজ, শবে কদর ও ঈদ-ই মিলাদুন্নবীতে পুরুষের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে আঁতর ও টুপির কেনার চাহিদাটা অনেক বেড়ে যায়।
 
টুপি বিক্রেতা বাবু মিয়া জানান, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই টুপি আঁতর বিক্রি বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় দেড়শ টুপি বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার টুপি, সুরমা ও সুগন্ধি আঁতর বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
 
নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ে ছালেক মার্কেটের সামনের ভ্রাম্যমাণ টুপি বিক্রেতা ওমর আলী বলেন, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় টুপির চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকেই আঁতর ও সুরমা কিনছেন। বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে ক্রেতারা চায় কম দামি টুপি আর আঁতর। সাদা টুপির ওপর ঝোঁক বেশি ক্রেতার।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনজুর আহমেদ আজাদ জানান, এ বছর ঈদে মানুষের কেনাকাটার ধুম পড়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মার্কেট ও ফুটপাতে বেচাকেনা চলছে। করোনার কারণে গত দুই বছরে বিক্রেতারা টুপি, আঁতর ও সুরমা বিক্রয় করতে পারেননি। এবার ঈদে সেই লোকসান পুষিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতারা। এ কারণে টুপি, আঁতর, সুরমা, জায়নামাজসহ প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ বিক্রি ধুম পড়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস