১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস!
এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়! সঙ্গে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি পোলাওয়ের চাল ও মাংসের মসলা। ঈদের দিন এমনি এক বাজার বসানো হয়েছে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে।
ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘গরিবের কসাইখানা’ নামের ব্যতিক্রমী এ ঈদ বাজার বসানো হয়।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল ১০টায় উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ১০ টাকার বিনিময়ে নিম্নআয়ের তিন শতাধিক পরিবারকে ১ কেজি গরুর মাংস, ১ কেজি পোলাওয়ের চাল ও মাংসের মসলা দেওয়া হয়। এর আগে রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজারের আয়োজন করে সংগঠনটি।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের সেফালি বেগম (৩৫) বলেন, বাজারে অনেকগুলো গরু জবাই করা হয়েছে। তা দেখে ছোট পোলায় বায়না ধরছে, ঈদে গরুর মাংস খাবে। তিনদিন ধরে পোলারে বুঝাইতাছি আজ না কাল, কিন্তু গরুর মাংস তো সাড়ে ছয়শ টাকা কেজি, কেমনে আনব। ঈদের দিন পোলায় মন খারাপ করব। সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। কিন্তু আল্লাহ ছোট বাচ্চাটার মনের ইচ্ছা পূরণ করছে। হঠাৎ করে আজ এত কম টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনতে পারলাম। এ দামে তো আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই।
বিজ্ঞাপন
কামারখাড়া এলাকার জয়মালা বেগম (৬৫) বলেন, কোরবানির ঈদ ছাড়া গরুর মাংস দেখি না। কোরবানি আইলে মানুষ গরুর মাংস দেয়। বছরের ওই ঈদেই শুধু গরুর মাংস খাই। রোজার ঈদে গরুর মাংস আর পোলাও খাইতে পারমু তা কখনোই ভাবতে পারি নাই। এর আগেও এখান থেকে ১০ টাকায় তেল-খেজুরসহ ৭-৮ প্রকার ইফতারির খাওন কিনে নিছি।
শিলই গ্রামের মারফত আলী (৬০) বলেন, বুড়ো বয়সে বাজারে পাহারাদারের কাজ করি। মাস শেষে ৫ হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। ঈদে যে বাজার করব, সেই টাকা নাই। অভাবের সংসারে বাজার থেকে গরুর মাংস কিননের কথা ভাবতেও ভয় লাগে। গতকাল বাজারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরু জবাই করা দেখলাম। মনে চায় একটু মাংস দিয়ে ভাত খাই কিন্তু সাহসে কুলায় না। রাতে যখন জানতে পারি এখানে ১০ টাকায় গরুর মাংস দেবে, তখনই নিয়ত করছি যেভাবেই হোক মাংস কিনব। তাই ঈদের নামাজ পড়ে দেরি করি নাই। সঙ্গে সঙ্গে চলে আসছি এখানে। এখন মাংস পেয়ে ঈদের আনন্দ ডাবল হয়ে গেছে আমার।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের দিন তিনশতাধিক পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে আমাদের এ ছোট আয়োজন। তবে আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি, আগামীতে সকলের সহযোগিতায় আরও বেশি সংখ্যক পরিবারের পাশে থাকতে পারব।
সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে মাংসের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে এত দামে কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন আয়োজন করেছি। ঈদের দিন আয়োজন করার মূল লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের মতো তারাও যেন এ দিন বাজার থেকে মাংস কেনার অনুভূতি লাভ করেন। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এ রকম আয়োজন করতে আমরা আরও উৎসাহ পাই।
ব.ম শামীম/এমএএস