ভরা মৌসুমেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর ভিওসি ঘাটের হাটে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। এটি দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের হাট হিসেবে পরিচিত। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে বসা এ হাটে ধানের মৌসুমে প্রতিদিন ৫-৬ কোটি টাকার ধান বেচাকেনা হয়। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকরা অপরিপক্ক ধান কাটতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে এসব ধানের অধিকাংশই অপুষ্ট এবং চিটা (চাল বিহীন)।

বর্তমানে হাটে ধানের আমদানি অনেকটাই কম। আর এখন যেসব ধান পাওয়া যাচ্ছে, তার মান তেমন ভালো নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ধানের এ সংকট প্রকট হলে বাজারে চালের দামও কিছুটা বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

বর্তমানে হাটে নতুন ধান উঠলেও বেচাকেনা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। হাটে বিআর-২৮ জাতের ধান মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮১০-৮৫০ টাকা এবং হীরা ধান বিক্রি হচ্ছে ৬২০-৬৭০ টাকা দরে। হাটে মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত ধান না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চালকল মালিকরা। তবে ঈদের পর হাটে বিআর-২৯ জাতের ধান উঠলে সংকট কিছুটা কাটতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার হাওর এলাকাগুলোতে উৎপাদিত ধান কৃষকদের কাছ থেকে কিনে ভিওসি ঘাটের হাটে নিয়ে আসেন বেপারীরা। জেলার আড়াইশরও বেশি চালকলে ধানের যোগান দেয় এ হাট। প্রতিদিন চালকলগুলোতে ১ থেকে দেড় লাখ মণ ধানের চাহিদা আছে।

এখানকার চালকল থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় চাল সরবরাহ করা হয়। হাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন ধানের মৌসুমে প্রতিদিন ঘাটে ধানবোঝাই অর্ধশত নৌকা এসে নোঙর করে। তবে এবার হাটে ধানের আমদানি কম। বর্তমানে প্রতিদিন ১৫-২০টি নৌকা আসছে ঘাটে। মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ মণ ধান বেচাকেনো হয় হাটে। আর বাকি সময়গুলোতে দিনে বিক্রি হয় ৩০-৪০ হাজার মণ ধান।

উজানের ঢল আর কালবৈশাখী ঝড়-শীলাবৃষ্টিতে এবার হাওরাঞ্চলের ধানি জমিগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে অনেক কৃষককে আগাম কাটতে হয়েছে আধাপাকা ধান। এতে হাটে আসা ধানগুলোর অধিকাংশই অপরিপক্ক এবং চিটা (চালবিহীন)। এক বস্তা (৮০ কেজি) ধানে ১৫-২০ কেজিই চিটা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের বালিখোলা গ্রামের ধান বেপারী মোশারফ হোসেন জানান, তিনি ১৩-১৪ বছর ধরে ধান ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে ভিওসি ঘাটের হাটে বিক্রি করেন। এবার কৃষকদের কাছে ধান পাওয়া যাচ্ছে কম। আর যা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো মানসম্পন্ন নয়।

মানিক মিয়া নামে এক আড়তদার জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার হাটে মানসম্পন্ন ধান আসছে না। অধিকাংশ ধানই চুচা (চালবিহীন)। হাটে এসব ধানের দাম কম। কারণ এসব ধান থেকে চাল কম হয়। তাছাড়া চালের মানও খারাপ হবে। সে জন্য এখন ভরা মৌসুমেও হাটে ধান কম বিক্রি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ অটোরাইসমিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, প্রতিদিন আমাদের চালকলগুলোতে যে পরিমাণ ধানের প্রয়োজন, তারচেয়ে অনেক কম ধান আসছে হাটে। অপরিপক্ক এবং চুচা (চালবিহীন) হওয়ায় এসব ধান থেকে চাল কম হচ্ছে। মানসম্পন্ন ধান না পাওয়ার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট চলতে থাকলে চালের দাম কিছুটা বাড়বে।

আশুগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকদের আধাপাকা ধান কাটতে হয়েছে। এর ফলে ধানগুলো অপরিপক্ক রয়ে গেছে। আর হাটে এসব ধানের দামও কিছুটা কম। তবে এখনো পুরোদমে নতুন ধান কাটা শুরু হয়নি। পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হলে হাটে ধানের সংকট থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরআই