বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দিতে অস্বীকার করায় স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন এক পাষণ্ড স্বামী। নির্যাতনের এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মরিচের গুড়া মেশানো পানি খেতে দেওয়া হয়। এমনকি ওই পানি ঢেলে দেওয়া হয় তার শরীরেও। শনিবার (১৪ মে) নেত্রকোণা সদর উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর নাম শিউলি আক্তার (২০)। তিনি ঝগড়াকান্দা গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী এবং ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরশিহারি গ্রামের সাইদুল ইসলামের মেয়ে। 

এ ঘটনায় রোববার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ স্বামী রফিকুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

মামলা ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন ও রাতে রফিকুল তার স্ত্রীকে নানাভাবে নির্যাতন করেন। প্রথমে মারধরের পর রশি দিয়ে খাটের সঙ্গে স্ত্রীকে সারা রাত হাত-পা বেঁধে রাখেন। পিটিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় সারা শরীর। পানির জন্য ছটফট করলে খেতে দেওয়া হয় মরিচের গুড়া মেশানো পানি। পরে ওই পানি ছিটিয়ে দেওয়া তার সমস্ত শরীরে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয় বাড়ির সামনের পুকুরে।

অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিন রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে রেখে আসতে যান। পরে বাবার বাড়ির লোকজন নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরে রফিকুলকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।

শিউলির বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি একজন রিকশাচালক। ছয়-সাত মাস আগে শিউলিকে নেত্রকোণা সদর উপজেলার ঝগড়াকান্দা গ্রামের লাল চান মিয়ার ছেলে রফিকুলের সঙ্গে বিয়ে দেই। বিয়ের সময় জামাইকে নগদ ৫০ হাজার টাকাও যৌতুক দেই।

শিউলি বলেন, বিয়ের পর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুক হিসেবে তার বাবার কাছ থেকে আসবাবপত্র অথবা টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে অসম্মতি প্রকাশ করলে স্বামীসহ পরিবারের সবাই আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।

এদিকে বিয়ের কিছু দিন পর আমি সন্তান সম্ভবনা হই। তারপরও যৌতুকের দাবিতে আমার ওপর তারা নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে ওষুধ খাইয়ে আমার গর্ভের সন্তানও নষ্ট করা হয়। এ কাজে সহায়তা করেন আমার স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী রুমা আক্তার। 

তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল থেকে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন আমার স্বামী। বেধড়ক মারধর করার পর  হাত-পা বেঁধে শরীরে মরিচ মেশানো পানি ঢেলে দেওয়া হয়। পানি খেতে চাইলে মুখে সেই পানি ঢেলে দেওয়া হয়। পরে পুরো শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হলে আমাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বাড়ির সামনের পুকুরে ফেলে দেন। তারপর প্রায় সারাদিন ওই পুকুরেই থাকতে হয়।

ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পীরজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতনের পর হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

জিয়াউর রহমান/এসপি