ভোলায় চরফ্যাশনে ঘুরতে গিয়ে মেঘনা নদীর পাড়ে এক প্রসূতি মায়ের নরমাল ডেলিভারি করেছেন চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন চিকিৎসক। এ ঘটনার একটি ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রশংসায় ভাসছেন ওই তিন চিকিৎসক। 

গতকাল বুধবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া প্রশান্তি পার্কে ঘুরতে গিয়ে এমন ঘটনার সম্মুখীন হন তিন চিকিৎসক। 

জানা যায়, ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা থেকে মুক্তা আক্তার (২৫) নামে এক প্রসূতিকে স্পিডবোটে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাটে প্রসব ব্যথা শুরু হয়। তিনি ঘাটে লুটিয়ে পড়েন। তখন ঘাটে থাকা চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. ফাইয়াজ হোসাইন খান, ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন ও ডা. নাহিদ হাসান বিষয়টি দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন এবং দায়িত্ব নিয়ে নরমাল ডেলিভারি করেন। 

এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফাইয়াজ হোসাইন খান বলেন, সারাদিনের কর্মব্যস্তাতার ক্লান্তি দূর করতে মেঘনা নদীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ এবং বেতুয়া পার্কের মেঘনার ভাসমান চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন ও ডা. নাহিদ হাসানের সঙ্গে রাত ১০টার দিকে বেতুয়া ঘাটে পৌঁছাই। কিছুক্ষণ পর ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে দেখতে পাই নদী থেকে একটি স্পিডবোট এসে ঘাটে ভিড়ছে। একজন প্রসূতি মা তার স্বামী সবুজসহ পরিবারের তিন সদস্য বোট থেকে নামেন। নেমেই প্রসূতি মা মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এবং প্রসব ব্যথায় ছটফট করতে শুরু করলেন। বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরে ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই কাজে নেমে পড়ি আমরা। ডা. সুরাইয়া প্রসূতি মাকে আশ্বস্ত করে সেখানেই নরমাল ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করেন। 

আমি ও ডা. নাহিদ হাসান নরমাল ডেলিভারি জন্য প্রয়োজনীয় কিছু চিকিৎসার সরঞ্জাম আনতে একটু দূরের ফার্মেসিতে যাই। সেখান থেকে  আমরা ব্লেড এবং কর্ড ক্ল্যাম্প ম্যানেজ করে আনতে আনতেই ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন কোনো ঝামেলা ছাড়াই নদীর পাড়ে ডেলিভারি সম্পন্ন করেন। কোনো গ্লাভস ছাড়াই তিনি কন্ট্রোলড কর্ড ট্র‍্যাকশনের মাধ্যেমে গর্ভফুল বের করে আনেন। পুরোটা ডেলিভারি তিনি সম্পন্ন করেন একদম খালি হাতে। 

ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন জানান, আল্লাহর রহমতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন প্রসূতি মা। আমার এ ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হয়েছে। প্রসূতি মা ও মেয়ে উভয়ই সুস্থ রয়েছেন। গতকাল রাতে তাদের চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। আজ দুপুরে মোটামুটি সুস্থ হয়ে মা ও মেয়ে বাড়ি চলে গেছেন। 

এ বিষয়ে প্রসূতি মুক্তা আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আল্লাহ আমার মেয়ের জন্য ওপর থেকে ডাক্তার  রুপে ফেরেস্তা পাঠাইছে। তারা না থাকলে আমি ও আমার মেয়ে নির্ঘাত মারা যেতাম। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আমাদের নতুন জীবন দেওয়ার জন্য। 

ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর