বরিশালের গ্রাম ও বস্তি এলাকার ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ নিয়মিত ৩ বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন না। এ ছাড়া ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ করতে পারেন না এবং ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের আয়বর্ধনমূলক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। জেলার সদর উপজেলার দুটি গ্রাম ও সিটি করপোরেশনের দুটি বস্তির প্রায় ৬ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রাপ্ত এই তথ্য প্রকাশ করেছে কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি)।

সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের সাতানী, নয়ানী গ্রাম এবং হীরননগর বস্তি ও আদি শশ্মানঘাট বস্তির সবগুলো খানায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ওই এলাকায় শতভাগ জরিপ চালিয়ে তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে চলতি বছরের ২৬ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

স্ট্রেনদেনিং পিপলস অ্যাকশন অন ক্লাইমেট রিস্ক রিডাকশন অ্যান্ড এনার্জি এফিসিয়েন্সি (স্পেস) প্রকল্পের এরিয়া কোঅর্ডিনেটর এজেডএম রাশেদ বলেন, বরিশাল জেলার সাতানী, নয়ানী, হীরননগর কলোনি এবং আদি শশানঘাট বস্তির মোট ১২৬৯টি খানার ৫ হাজার ৭০৯ জন ব্যক্তির ঝুঁকি নিরূপণে জরিপ পরিচালনা করা হয়। খানা সমূহের মাসিক গড় আয় ১১ হাজার ৩৮০ টাকা। এর মধ্যে নয়ানী গ্রামে গড় আয় সবচেয়ে বেশী, ১১ হাজার ৭০৩ টাকা এবং আদি শশানঘাট বস্তির গড় আয় সবচেয়ে কম, ৯ হাজার ৫১৭ টাকা।

শিক্ষার দিক দিয়েও তারা যথেষ্ঠ পিছিয়ে আছে। ১৭ দশমিক ১ শতাংশ অধিবাসী এখনো নিরক্ষর। শুধুমাত্র স্বাক্ষর করতে পারে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ খানার প্রধান পেশা দিনমজুর। তাদের ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ ভূমিহীন। জলবায়ু সংবেদনশীল হওয়ায় এই জনগোষ্ঠী বিপদাপন্ন। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিপদাপন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৭ম। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৯১টি জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। বাংলাদেশের বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর জলবায়ুজনিত এসব বিপদ-আপদের ক্রমবর্ধমান প্রকোপ জনগোষ্ঠীর জলবায়ু ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ওই দুটি গ্রাম ও দুটি বস্তির বিপদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে নদী ভাঙন, অসময়ে বন্যা, বজ্রপাত, অতিবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ এবং শৈত্যপ্রবাহ প্রতিবছর আক্রান্ত করে। জলাবদ্ধতা, খরা, শিলাবৃষ্টি এবং টর্নেডো প্রতি দুই বছরে একবার আক্রান্ত করে। এইসব বিপদে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ খানা উচ্চ মাত্রায় এবং ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ খানা মাঝারি মাত্রায় উন্মুক্ত। 

ভবিষ্যতে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ খানার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে, ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ খানার স্বাস্থ্যহানি, ৯২ শতাংশ খানার নিরাপদ পানি প্রাপ্তিতে এবং ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ খানার জীবিকার উৎস হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ খানার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওই এলাকায় নদীভাঙনের ফলে ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ খানা নদীগর্ভে বিলীনের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ১৭ শতাংশ লোক দুর্যোগ বিষয়ক কোনো আগাম সতর্কতা পান না। ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ দুর্যোগের সময় কোনো সহযোগিতা পায় না। এমনকি আদি শশ্মানঘাট বস্তির ৯০ শতাংশ সহযোগিতা প্রাপ্তির বাইরে থেকে যায়। আদি শশ্মানঘাট বস্তিতে ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশ এখনো স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিস্কাশন ব্যবস্থার বাইরে। 

হীরননগর বস্তির ৯১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া দুই গ্রাম, দুই বস্তির ৪১ দশমিক ২ শতাংশের বিপদাপন্নতা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে, ৫১ দশমিক ৬ শতাংশের বিপদাপন্নতা উচ্চ ঝুঁকিতে এবং ৭ দশমিক ২ শতাংশের মাঝারি মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে।

এজেডএম রাশেদ আরও বলেন, এসব স্থানের ঝুঁকি হ্রাস করতে আমরা ৭টি প্রস্তাবনা এনেছি। সিডিপি মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০০১ সাল থেকে কাজ করে আসছে। ২০২০ সাল থেকে ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের আর্থিক সহায়তায় স্পেস নামক প্রকল্পটি দেশের ঢাকা, খুলনা, ঝিনাইদহ, বরিশাল, বাগেরহাট জেলায় বাস্তবায়ন করছে। এই ৫ জেলার ১৪টি গ্রাম এবং ৬টি বস্তির মোট ৪ হাজার ২৭৭টি খানায় ঝুঁকি নিরূপণের জরিপ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল এনজিও ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি আনোয়ার জাহিদ, ম্যাপের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর চক্রবর্তী, প্রকল্পের ভিলেজ রেজিলেন্স টিম এবং নয়ানী ও হিরননগর গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিনিধিবৃন্দ।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরআই