সৌদি আরবের আল গাসিম এলাকায় কর্মরত বাংলাদেশি যুবক শরীফ হোসেনের (২২) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তবে শরীফকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। শরীফ হোসেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের জাজিরা এলাকার মো. সিরাজের ছেলে। 

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) শরীফের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছে তারা পরিবার। 

পরিবার সূত্র জানায়, প্রায় ৭ মাস আগে খেজুরের বাগানে কাজ করার উদ্দেশ্যে শরীফ সৌদিতে যান। সৌদিতে কর্মরত কমলনগরের হাজিরহাট ইউনিয়নের আলাউদ্দিনের মাধ্যমে তিনি সেখানে যান। কিন্তু তাকে খেজুরের বাগানে কাজ দেওয়ার পরিবর্তে একটি কসাইখানায় (মাংসের দোকানে) চাকরি দেন। ওই দোকানের মালিক তাকে প্রায়ই মারধর করত বলে শরীফ পরিবারকে জানিয়েছিল। 

পরে তার বাবা সিরাজ ঘটনাটি আলাউদ্দিনকে মোবাইলফোনে জানায়। কিন্তু আলাউদ্দিন কোনো গুরুত্ব দেননি। সম্প্রতি আলাউদ্দিন ছুটিতে দেশে আসেন। আলাউদ্দিন ছুটিতে আসার পর থেকে শরীফের সাথে পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সিরাজ ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আলাউদ্দিনের শরণাপন্ন হন। কিন্তু আলাউদ্দিন জানায়, শরীফ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। 

ঘটনাটি রহস্যজনক হওয়ায় গত ৮ মার্চ শরীফের বাবা আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কমলনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে শরীফের মরদেহ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আলাউদ্দিনকে চাপ দেওয়া হয়। বৈঠকের কয়েকদিন পর আলাউদ্দিন ফের সৌদিতে চলে যান। এরপর থেকে তিনি শরীফের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। 

নিহত শরীফের বাবা মো. সিরাজ বলেন, ধার-দেনা করে ছেলেকে সৌদিতে পাঠিয়েছি। কসাইয়ের দোকানের মালিক আমার ছেলেকে নির্যাতন করত। এখন শুনি আমার ছেলে মারা গেছে। আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার ও আমার ছেলের মরদেহ ফেরত চাই। 

অভিযুক্ত আলাউদ্দিনের স্ত্রী ফেরদাউস বেগম বলেন, সৌদি থেকে লাশ ফেরত পাঠানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন স্থানীয় চেয়ারম্যানের একটি প্রত্যয়নপত্র পাঠালেই মরদেহ দ্রুত চলে আসবে। শরীফের সঙ্গে এলাকায় এক মেয়ের সাথে প্রেম ছিল। ওই মেয়ে আরেক ছেলের সাথে ছবি তুলে শরীফকে পাঠায়। এতে ক্ষোভে শরীফ আত্মহত্যা করেন। 

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সৌদি থেকে শরীফের মরদেহ আনার জন্য আবেদন করেছে পরিবার। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরআই