চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে শত্রুতাবশত রাতের অন্ধকারে দেওয়া বিষে পুড়ছে এক কৃষকের দেড় বিঘা জমির বেগুন। চোখের সামনে মারা যাচ্ছে বেগুনসহ গাছ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক জামাল উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাতে উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের দায়েমপুর গ্ৰামে এ ঘটনা ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জামাল উদ্দিনের বেগুন ক্ষেতে ঘাস মারা বিষ দেয় দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার সকালে কুষক জামাল জমিতে গিয়ে দেখতে পান, বেগুনগাছের পাতা শুকিয়ে মরতে শুরু করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেগুন ধরা গাছগুলো চোখের সামনে মরতে দেখে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। 

জানা যায়, ২০ হাজার টাকায় দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ৭০ হাজার টাকা ঋণ করে বেগুন চাষ করেছিলেন জামাল উদ্দিন। গত দুই মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফলনও হয়েছিল বাম্পার। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জামাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রত্যেক বছর আমি বেগুন চাষাবাদ করি। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে বেগুন চাষ করেছিলাম। কিন্তু কে বা কারা রাতের অন্ধকারে ঘাস মারা বিষ দিয়ে আমার সব শেষ করে দিল। দেড় বিঘা বেগুনের মধ্যে ১৫ কাঠা জমির বেগুন ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, গাছে বেগুন ধরা শুরু হয়েছিল। আমার চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। এই বেগুন থেকে যে আয় হয়, তাতে আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চলে। দেড় বিঘা জমিতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। এখন আমি নিরুপায়। ঋণের বোঝা নিয়ে সংসার কেমনে চালাব?

স্থানীয় কৃষক ইউসুফ আলী জানান, জামাল একেবারে সহজ-সরল মানুষ। আমার জানা মতে, তার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। কিন্তু তার বেগুনের জমিতে কে এত বড় সর্বনাশ করল, তা আমরা ভেবে পাচ্ছি না। সে প্রতি বছরই বেগুন চাষ করে। যে বা যারা এই কাজ করেছে, তাদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, বেগুনের জমিতে ঘাস মারা বিষ দেওয়া হয়েছে। ঘাস মারা বিষের একটি বৈশিষ্ট্য হলো ধীরে ধীরে গাছের পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যাবে। জামালের বেগুনেও তাই হচ্ছে। 

গোমস্তাপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল বলেন, কৃষক জামালের জমিতে আগাছানাশক বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। এমনটি আমিও শুনেছি। রোববার সরেজমিনে যাব। তবে ঘাস মারা বিষ দেওয়া থাকলে, জমিতে অধিক হারে পানি ও কিছু ভিটামিন প্রয়োগ করলে কিছুটা হলেও রিকভার করা যায়। সরেজমিনে পরিদর্শন করে তাকে কৃষি বিভাগ থেকে সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করা হবে। 

পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিষ মেরে বেগুনের জমির ক্ষতির বিষয়টি শুনেছি। এটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে কারও সঙ্গে শত্রুতা থাকতেই পারে, তাই বলে ফসলের সঙ্গে এমন করা বড় অন্যায়। 

গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি