পরিবেশকে দুষণমুক্ত রেখে এক বা একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগবালাইকে অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমার নিচে রাখাই হচ্ছে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা। বাদাম চাষে আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা গ্রহণের ফলে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি পরিবেশও দূষণ হচ্ছে না। ফলে পটুয়াখালীতে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে আইপিএম পদ্ধতি। 

জানা গেছে, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূলের বালুযুক্ত মাটিতে বাদামের ভালো ফলন হচ্ছে। তবে বাদাম চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ হওয়ায় কৃষক বিভিন্ন সময় ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের চাষাবাদে আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিতে পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় বাদামের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। ইউএসআইডি মিশনের অর্থায়নে ফিট দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ইন্ট্রিগেডেট পেস্ট ম্যানেজমেন্ট একটিভিটি নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের বাদাম ক্ষেতে আঠালো ফাঁদ, ফেরোমন ফাঁদ, পাচিং এসওপি এবং বায়োপেস্টিসাইড ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ফিট দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ইন্ট্রিগেডেট পেস্ট ম্যানেজমেন্ট একটিভিটির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলায় পাঁচটি প্রদর্শনী দিয়েছি। এ থেকে আমরা কৃষকদের দেখানোর চেষ্টা করেছি, চিনা বাদামে যে প্রধান প্রধান পোকা আক্রমণ করে, তা প্রতিরোধে কোনো কেমিকেল পেস্টিসাইড ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে তাদের ফলনের পার্থক্যও দেখানো হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, পটুয়াখালীতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষ হয়। তাই কৃষকরা যেন এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আধুনিক এবং নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এবার ভালো ফলনও পাওয়া গেছে। পাশপাশি ভালো দাম পাওয়ায় খুশি স্থানীয় কৃষকরা। 

পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামের কৃষক আজাদ মিয়া বলেন, বিগত বছরগুলো থেকে এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি। এবার বাদামের দামও ভালো। কাঁচা অবস্থায় ২৩০০ টাকা মণ এবং শুকনো অবস্থায় ৪ হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করতে পারছি। আমার এলাকার যারা এখনো এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেননি তাদের উৎসাহিত করেছি। তারা যেন আগামী বছর আইপিএম পদ্ধতিতে বাদাম চাষ করে।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘অনুকুল আবহাওয়া এবং ভালো ফলন পাওয়ায় বিগত বছরের থেকে এবার পটুয়াখালীতে বেশি পরিমাণ জমিতে চিনা বাদামের আবাদ হয়েছে। গত বছর ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষ হলেও এবার হয়েছে ৫ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমিতে। তবে আইপিএম পদ্ধতিতে চাষাবাদ কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে, কৃষকরা যেমন অধিক ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তেমনি বাদাম চাষে তাদের আগ্রহও বাড়বে। এতে করে বাদাম থেকে তেল উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্ট্রিটিউটের পটুয়াখালী সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চিনা বাদাম দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যতম একটি তেল জাতীয় ফসল। তবে এই অঞ্চলে এখন স্থানীয় জাতের চিনা বাদাম আবাদ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কৃষকরা যদি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্ট্রিটিউট উদ্ভাবিত বারি চিনা বাদাম-৮ এবং বারি চিনা বাদাম- ৯ চাষাবাদ করেন, তবে কৃষক অনেক বেশি ফলন পাবে। পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় উন্নত জাতের বীজ, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারলে, বাদাম উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে।

এসপি