সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় কাদায় আটকে আহত হওয়া সেই বুনো হাতিটি। শনিবার (২৮ মে) কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটির মৃত্যু হয়।

এর আগে অসুস্থ হয়ে পড়া হাতিটির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দেয় গত ২২ মে। এর পরদিন থেকে অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়।

এতে নেতৃত্ব দেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অন্যরা হলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ভজন চন্দ্র দাস, ঢাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (অব.) ডা. মো. ফরহাদ হোসেন, চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী। সদস্যসচিব ছিলেন পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসচিব ও পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন জানান, হাতিটিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনার পর থেকেই এটি অনেকটাই চলনশক্তিহীন অবস্থায়ই ছিল। বয়স অনুপাতে হাতিটি যে পরিমাণ খাবার গ্রহণের কথা ছিল, তার সামান্যটুকুই গ্রহণ করত। অনেক সময় মুখ থেকেও খাবার ফেলে দিত। এ ছাড়া অসুস্থ হওয়ার পর থেকে হাতিটির পায়খানা-প্রস্রাবও বন্ধ ছিল।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী বলেন, মেডিকেল বোর্ড গঠন করে হাতিটির চিকিৎসা কার্যক্রম যেদিনই শুরু করা হয়েছিল, সেদিনই নিশ্চিত হওয়া গেছে হাতিটি বাঁচবে না। কারণ কাদায় আটকে পড়া অবস্থায় এর পেটে কাদা ঢুকে গিয়েছিল। এ কারণে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এরপরও আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা ছিল একে সুস্থ করে তুলতে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১৩ মে বিকেলে হাতিটিকে ট্রাকে চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনা হয়। এদিন থেকে হাতিটিকে পার্কের হাতির গোদা নামক স্থানে রেখে নিয়মিত নজরদারিতে রেখেছিল পার্ক কর্তৃপক্ষ। পার্কে আনার পরপরই হাতিটি প্রথম দিকে বুনো আচরণ শুরু করলেও পরে একেবারে শান্ত ও নিস্তেজ ছিল।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে এই বুনো হাতিটিকে কাদায় আটকে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে বন বিভাগ। এরপর একে বনে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু এর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং কাদায় আটকে পড়া অবস্থায় পেটে কাদামাটি ঢুকে পড়ে। তাই সেটিকে চিকিৎসার জন্য কোদালা বন বিটের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। সেখানে পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফল না আসায় প্রধান বন সংরক্ষকের নির্দেশে হাতিটিকে পাঠানো হয় সাফারি পার্কে। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে মারা যায় হাতিটি।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রায় ১০ বছর বয়সের এই বুনো হাতিটিকে সুস্থ করে তুলতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আশা করেছিলাম হাতিটি সুস্থ হয়ে ফের বনে ফিরতে পারবে। তবে শত চেষ্টার পরও হাতিটিকে বাঁচানো যায়নি। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

সাইদুল ফরহাদ/এনএ