আবেগঘন পরিবেশে ডিসিকে বিদায় জানাল শেরপুরবাসী
শেরপুর থেকে বিদায় নিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোমিনুর রশীদ। সোমবার (৩০ মে) দুপুরে তিনি শেরপুর ছেড়ে যান। উপসচিব হিসেবে তার নতুন কর্মস্থল শিল্প মন্ত্রণালয়।
এদিকে ডিসি মোমিনুর রশীদের বিদায়ে চোখ ভিজেছে জেলার সকল শ্রেণিপেশার মানুষের। অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি তিনি নিজেও। এদিন শেরপুর ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে সরকারি বাংলোতে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জেলাবাসী ছাড়াও চোখের জলে বিদায় জানান তার সহকর্মীরাও।
বিজ্ঞাপন
মোমিনুর রশীদ শেরপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে গত বছরের ২১ শে জুন যোগদান করেন। স্বল্প কার্যকালে জেলার সব মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন আলোচিত এই জেলা প্রশাসক। নানা কাজের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন একাধিকবার। তিনি করোনা মোকাবিলায় ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়িয়েছেন শহর থেকে ইউনিয়নে।
এদিকে ১৯ মে ডিসি মোমিনুর রশীদের পদন্নোতি সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে সেদিন রাতেই জেলায় মাইকিং করে মানববন্ধনের ডাক দেয় শেরপুর নাগরিক সমাজ। তার বদলি যেন দ্রুতই না হয় সেই অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয় শত হাজারো মানুষ।
বিজ্ঞাপন
রক্তসৈনিক শেরপুরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল আমিন রাজু বলেন, এ রকম জনপ্রিয় জনবান্ধব ডিসি শেরপুরবাসী কখনো পায়নি। কতটা জনপ্রিয় হলে ডিসির বদলি চেয়ে মানববন্ধন হয়। এ রকম ভালো মানুষকে বিদায় জানাতে আমাদের সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারণ্য’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন জানান, অতীতে যে কোনো জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রবেশ করতে হলে অনুমতির প্রয়োজন হতো। কিন্তু ডিসি মোমিনুর রশীদের অফিসে যেতে হলে কারও অনুমতির প্রয়োজন হতো না। তিনি এই অল্প সময়ে যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন, সেটি অকল্পনীয়।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বাপ্পী দে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিসি মোমিনুর রশীদ মৃতপ্রায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রকে ফিরিয়ে এনেছেন নতুন রূপে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শেরপুরের এই অন্যতম পর্যটন স্থানে কেবল কার, জিপ লাইনিং, সুইমিংপুল, ঝুলন্ত ব্রিজসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার নির্দেশে জেলার নিরাপত্তা বিধানে প্রতিটি মোড় সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এ রকম একজন জনপ্রিয় জনবান্ধব ডিসিকে জেলায় আরও কয়েক মাস প্রয়োজন ছিল।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, শেরপুর প্রেসক্লাবের কোনো নিজস্ব জায়গা বা ভবন নেই। নিজস্ব জায়গা ও ভবনের জন্য অনেক ডিসির কাছে আমরা গিয়েছি। কিন্তু তারা সকলেই শুধু আমাদের আশ্বস্ত করেই দিন পার করেছেন। অথচ ডিসি মোমিনুর রশীদের কাছে যাওয়ার পরপরই তিনি আমাদের একটি খাস জায়গা প্রেসক্লাবের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি একজন সাংবাদিকবান্ধব কর্মকর্তা।
জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, ডিসি মোমিনুর রশিদ থাকাকালীন জেলা ক্রীড়া অঙ্গনের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। করোনার জন্য দীর্ঘদিন বিভিন্ন খেলা বন্ধ থাকলেও ডিসি মোমিনুর রশীদের সহযোগিতায় শেরপুর ক্রীড়াঙ্গন তার পুরোনো চেহারা ফিরে পায়। তিনি ইনডোর খেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন খেলার আয়োজনের নির্দেশ দেন। তার অনুরোধে ইউনিয়ন পর্যায়ে ফুটবল খেলা ছড়িয়ে যায়। অসহায় পরিবারের খুদে খেলোয়াড়দের যেন কষ্ট করে মাঠে আসতে না হয়, সেজন্য তিনি প্রতিটি খেলোয়াড়কে বাইসাইকেল প্রদান করেন।
এ বিষয়ে বিদায়ী জেলা প্রসাসক মোমিনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শেরপুর জেলার মানুষের ভালোবাসা আমি চিরকাল মনে রাখব। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি শেরপুর জেলা আমার সেকেন্ড হোম। আমি যেখানেই থাকি এ জেলার সার্বিক উন্নয়নে আমার সহযোগিতা থাকবে। শেরপুর জেলায় আমি যা কিছুই করেছি তা সবই ছিল আমার রুটিন ওয়ার্ক, বাকিটা শেরপুরবাসীর ভালোবাসা।
জাহিদুল খান সৌরভ/আরএআর