আড়াই বছর পর ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন, মূলহোতা গ্রেপ্তার
আড়াইবছর পর ডুমুরিয়ার আলোচিত এবং ক্লুলেস সৌরভী মণ্ডল (৪৫) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা প্রণব কুমার মণ্ডলকে (৩৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর প্রণব ভারতে পালিয়ে যান। আড়াইবছর পর দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরইমধ্যে হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে তিনি।
জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মো. আজহারুল ইসলাম। বুধবার (১ জুন) দুপুরে পিবিআই খুলনা জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের মুখপাত্র সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, নিহত সৌরভী মণ্ডল পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একজন মাঠকর্মী ছিলেন। তিনি সুদের ব্যবসাও করতেন।
মামলার আসামি প্রণব মণ্ডল ১৫ হাজার টাকা ধার নেন সৌরভীর কাছ থেকে। একাধিকবার টাকা ফেরত দিতে চেয়েও দেননি তিনি। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই সকালে সৌরভী টাকা ফেরত নিতে প্রণবের বাড়িতে যান। টাকা না দিলে মামলা করার হুমকিও দেন সৌরভী।
বিজ্ঞাপন
ওই দিনগত রাতে প্রণব স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে প্রণব সৌরভীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যান। ওই সময়ে সৌরভীকে তিনি জানান তার অনেক সমস্যা, টাকাটা দিতে পারবেন না। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে প্রণব তার গলা চেপে ধরলে সৌরভীর মৃত্যু হয়। নড়াচড়া করতে না দেখে সৌরভীর গলায় গামছা পেঁচিয়ে বারান্দায় ফেলে পালিয়ে যান প্রণব।
তিনি আরও বলেন, কেউ যেন সন্দেহ না করে সে জন্য সকালে মানুষের সঙ্গে সৌরভীর লাশ দেখতে তাদের বাড়িতেও যান প্রণব। হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন পর প্রণব পালিয়ে ভারতে চলে যান। দীর্ঘ আড়াই বছর পর দেশে ফেরেন। মোবাইল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, সৌরভী হত্যা মামলাটি ছিল ক্লুলেস। নিহতের স্বামী ৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। আসামিরা সবাই নিহতের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা ছিল। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই জামিনে আছে। প্রথমদিকে মামলাটি ডুমুরিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করে।
তবে পরে পুলিশের তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় বাদীর আবেদনে আদালত ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ঘটনাস্থল ও আশপাশের মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
এক সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, প্রণব নিহতের কাছ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা নেন ও হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। তখনই পিবিআই নিশ্চিত হয় এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রণব জড়িত আছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর প্রণব ডুমুরিয়ায় ফিরে আসেন। গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। পরে বিভিন্ন সোর্স ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রণবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহাম্মদ মিলন/আরআই