একটু পরপর অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। কোনো অ্যাম্বুলেন্সে একটি আবার কোনোটিতে দুটি মরদেহ। অ্যাম্বুলেন্স আসার সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীরা ছুটে গিয়ে মরদেহগুলো গ্রহণ করছেন।

হাসপাতালের মর্গের সামনে জড়ো হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের মধ্যে স্বজনদের সংখ্যা বেশি। কেউ খোঁজ নিতে এসেছেন, কেউ এরই মধ্যে পেয়েছেন স্বজনের মরদেহ। কেউ মরদেহ পেয়ে কান্না করছেন, কেউ আবার না পেয়ে।

মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ফাতেমা আক্তার। বাবা ফারুক (৫০) কাজ করতেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় কথা হয় বাবার সঙ্গে। এরপর আর কথা হয়নি। সীতাকুণ্ডসহ কয়েকটি জায়গায় খোঁজ নিয়েও পাননি বাবাকে।

আরও পড়ুন : আমি মারা যাচ্ছি বাবা, আমাকে মাফ করে দিও

ঢাকা পোস্টকে ফাতেমা বলেন, বাবা শনিবার কাজে যোগ দেন। আগুন লাগার সংবাদ পাওয়ার পর থেকে বাবার ফোনে কল দিচ্ছি। কিন্তু মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, সেখানে তার খোঁজ পাইনি। সকাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে খুঁজছি কিন্তু কোনো সন্ধান পাইনি। আপনারা আমার বাবাকে খুঁজে দেন, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাতেমা। 

একই অবস্থা নুরুল কাদের নামে একজনের। ডিপোয় আগুন লাগার খবর পেয়ে শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর থেকে তার খোঁজ মিলছে না। বন্ধ রয়েছে সেলফোনও। এ অবস্থায় তার জীবিত থাকা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্বজনরা।

নুরুল কাদেরের ফুফাত ভাই মনির হোসেন বলেন, রাতে যখন নুরুলের সঙ্গে কথা হয় তখন সে বলেছিল বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার সন্ধানে রাতেই ঘটনাস্থলে আসি। কিন্তু ডিপো এলাকায় তাকে পাইনি। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিই। কিন্তু সেখানেও তাকে না পেয়ে চট্টগ্রামের অন্য সব বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি। এখনো তাকে পাইনি।

রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। দুর্ঘটনায় তাদের কারো মাথায় আঘাত লেগেছে, কারো আবার দুই হাতই ঝলসে গেছে। আরেকজনের পেটের এক পাশ ভেতরে ঢুকে গেছে। আহত ব্যক্তিদের আর্তনাদ আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে মেডিকেলের বার্ন ইউনিট। 

উদ্বিগ্ন স্বজনদের একজন তাহের উদ্দিন। তার চাচাত ভাই রফিক উদ্দিনের দুই হাত ও মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো। তিনি বলেন, ভাইয়ের ফেসবুকের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পারি। এরপর ভাইকে ফোন দিয়ে না পেয়ে সীতাকুণ্ডে চলে আসি। সেখানে না পেয়ে মেডিকেল এসে জানতে পারি তিনি ৩৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। এরপর বাড়িতে খবর দিই।

মেডিকেলের ৩৬নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স সোমা দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৯৩ জনের লিস্ট আছে আমার কাছে। সবাই কম-বেশি আঘাতপ্রাপ্ত। তাদের চিকিৎসা চলছে। এত রোগী একসঙ্গে আর কখনো দেখিনি আমি।

আরএইচ/এসপি