ফল বাঁচাতে ফাঁদ পেতে মারা হচ্ছে শত শত পাখি
বরগুনা সদর উপজেলার একটি ফলের বাগানে ফল রক্ষা করতে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত পাখি। এসব পাখির মধ্যে শালিক, ফিঙ্গে ও বুলবুলির সংখ্যা বেশি। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
অবাধে এভাবে পাখি হত্যা বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে জেলার পাখি ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামের আহসান হাবিব প্রবাসী ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি ২০০৮ সালে বাড়ির পেছনে দেড় একর জমিতে বিভিন্ন জাতের বৃহৎ ফলের বাগান গড়ে তোলেন। বাগানে ৮০ আম, ৪০টি জাম ও লিচুগাছ রয়েছে। এই বাগানে পাখি ঢুকে ফলসহ বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এসব গাছের ফল রক্ষায় বাগানমালিক গাছে জাল দিয়ে আটকে রেখেছেন। এতে মারা পড়ছে শত শত পাখি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আহসান হাবির নামে এক চাষি বাড়ির পেছনে দেড় একর জমিতে আম ও জামের বাগান করেছেন। এই বাগানে প্রতিদিন শালিক, বুলবুলি, দোয়েল ও ফিঙ্গেসহ নানা প্রজাতির বহু পাখি আসছে। পাখির হাত থেকে ফল রক্ষা করতে গাছগুলোতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। জালের ভেতরে পাখি প্রবেশ করতে পারলেও আর বের হতে পারছে না। আটকে পড়ে পাখিরা মার যাচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর বাগানের ফল পাখির হাত থেকে রক্ষার জন্য এভাবেই জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখেন বাগানমালিক। ফাঁদে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আটকে গিয়ে মারা যায়। এসব মরা পাখি পচে গিয়ে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এসব বন্য পাখি ফসলের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে থাকে। এভাবে নির্বিচারে পাখি মারা হলে ফসলে পোকার উপদ্রব বেড়ে যাবে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বাগানটির মালিক আহসান হাবিবের কাছে বলেন, বাগানের ফল রক্ষার জন্য জাল দেওয়া হয়েছে। আমি কোনো পাখি হত্যা করছি না। কিছু পাখি জালে আটকে গেলে শিশুরা ধরে নিয়ে যায়। জাল দিয়ে পাখির উপদ্রব কমানো যাচ্ছে না, বাগানের ফল নষ্ট করেই যাচ্ছে।
ইমরান টিটু নামে এক প্রকৃতিপ্রেমী বলেন, এসব পাখি ফলসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এতে আমরা উপকৃত হই। ফলবাগানটি আমি ঘুরে দেখেছি, যেভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে, এটা মারাত্মক অন্যায়। এতে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাবে। হুমকিতে পড়বে আমাদের জীববৈচিত্র্য।
অ্যানিমল লাভারস্ বরগুনার সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীতে সব প্রাণীর মুক্ত ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থকার অধিকার রয়েছে। বাগানটিতে নির্বিচারে পরিকল্পিতভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। শিঘগিরই ওই ফল-বাগানে অভিযান চালিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
বরগুনার সহকারী বন সংরক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্য প্রাণী আইনে ফাঁদ পেতে কোনো প্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। ওই বাগানের পাখি হত্যার বিষয়টি জানা ছিল না। স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এনএ