হিলি সীমান্তের শূন্যরেখায় এ রকম আয়োজন এবার চোখে পড়বে না

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ৫ বছর ধরে এই দিনে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের শূন্যরেখার আঙিনায় বসে বাংলাদেশ ও ভারত বাংলাভাষীর মিলনমেলা। এই দিনে শূন্যরেখায় স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনার ঘেঁষে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। অনুষ্ঠানে উভয় দেশের নৃত্যশিল্পী ও গায়করা গান-নৃত্য পরিবেশন করেন। এখানে দু’দেশের কবিগণ উপস্থিত হয়ে কবিতা আবৃতি করেন।

তবে করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক বছরের মতো এবার সীমান্তের শূন্যরেখায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারতের মিলনমেলা আজ বসছে না। মূলত স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামীতে আবার এ অনুষ্ঠান শুরু করা হবে বলে জানান বাংলাদেশের আয়োজক কমিটির উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন বাংলাদেশের জাহিদুল ইসলাম জাহিদ এবং ভারতের বালুরঘাটে উজ্জীবন সোসাইটির সম্পাদক সুরজ দাশ। মিলনমেলা ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর সীমান্তের শূন্যরেখার আঙিনায় বসে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামীতে আবারও উড়বে দুই দেশের পতাকা

আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায় ‘প্রতি বছর হিলি সীমান্তের রেল লাইনের পাশে শূন্যরেখার আঙিনায় একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই আয়োজন করা হয়। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনার ঘেঁষে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। দু’দেশের রাজনৈতিক, সমাজসেবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে চলে সারাদিনব্যাপী আলোচনা সভা, গান, নৃত্য আর কবিতার আসর।

অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য আত্মদানকারী সেই সব শহীদের। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সকল ভেদাভেদ ভুলে যান এই দু’দেশের বাংলাভাষী মানুষ। তবে এবারকার চিত্র ভিন্ন। মহামারি করোনার কারণে এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে না।

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এবার করোনার কারণে হিলি সীমান্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। ইতোমধ্যে দু’দেশের আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এই আয়োজন অব্যাহত রাখতে আমরা আজ ওপার বাংলার আয়োজকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে একুশের আলোচনা সভা করব। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামীতে আবারও অনুষ্ঠান করা হবে।’

এদিকে ভারতের পশ্চিমবাংলার বালুরঘাট উজ্জীবন সোসাইটির সম্পাদক সুরজ দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘১৯৫২ সালে ভাষার জন্য শহীদদের স্মরণে আমরা হিলি সীমান্তে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজন করে আসছি। এবার করোনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বালুরঘাটের তিওড়ে ছোট্ট পরিসরে দিবসটি উদযাপনের আয়োজন করেছি। সেখানে বাংলাদেশের আয়োজকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’

হাকিমপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দু’দেশের এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা কাঁটাতারের বিভেদ ভুলে যাই। দু’দেশের বাংলাভাষাভাষীর মধ্যে মিলনমেলা ঘটে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার এই অনুষ্ঠানটি করা সম্ভব হয়নি।’

মাহাবুর রহমান/এমএসআর