মোংলা বন্দরে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ২০ হাজার ৮০৮টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি হয়েছে ১৩ হাজার ৯১৩টি গাড়ি। ফলে চট্টগ্রামের চেয়ে প্রায় ৭ হাজার গাড়ি বেশি এসেছে মোংলায়। দেশের মোট আমদানির ৬০ শতাংশ এসেছে মোংলা বন্দর দিয়ে। আর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৪০ শতাংশ গাড়ি। 

আমদানি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বন্দরে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি ৪টি সুনির্দিষ্ট কারণের কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা বন্দর দিয়ে প্রথম ২০০৯ সালে ৮ হাজার ৯০৯টি গাড়ি আমদানির মাধ্যমে বন্দরে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৮০৮টিতে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আহসান আরজু বলেন, আমাদের সংগঠনের প্রায় ৩০০ সদস্য মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। কম সময়ে গাড়ি খালাস ও রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে বেশি পছন্দ করেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আগের থেকে অর্ধেক সময়ে গাড়ি মোংলা থেকে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে। ফলে এই বন্দর দিয়ে আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. নেয়াজুর রহমান বলেন, মোংলা বন্দর থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার ৫২ শতাংশ আসে গাড়ি আমদানির কর থেকে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। ১১ মাসেই (মে -২০২২ পর্যন্ত) রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। গাড়ি আমদানির যে রেকর্ড এ বছর হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি রাজস্ব আদায় হবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. মুসা বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের দুই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি হয়েছে ৩৪ হাজার ৭৮৩টি। এর মধ্যে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ২০ হাজার ৮০৮ আর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি হয়েছে ১৩ হাজার ৯১৩টি গাড়ি। 

মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি ক্রমেই বাড়ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমদানিকারকদের বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, স্বল্প সময়ের মধ্যে এই বন্দর থেকে গাড়ি খালাস, আমদানি করা গাড়ি রাখার জন্য উন্নতমানের শেড ও ইয়ার্ড নির্মাণ এবং গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সার্বক্ষণিক টহল ও সিকিউরিটি ক্যামেরায় মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিতের ফলেই আমদানি বেড়েছে।

বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েক বছরে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে এ বন্দরের দূরত্ব হবে ১৭০ কিলোমিটার। অপরদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা বাণিজ্যিক স্বার্থে মংলা বন্দর ব্যবহার করবেন।

১৯৫০ সালে পশুর নদীর জয়মনির ঘোলে ‘দি সিটি অব লিয়নস’ নামে প্রথম ব্রিটিশ পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙ্গরের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় চালনা অ্যাংকারেজ পোর্ট নামে মোংলা সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নানা সমস্যা মোকাবিলা করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে মোংলা সমুদ্র বন্দর।

তানজীম আহমেদ/আরআই