বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি/ছবি: ঢাকা পোস্ট

এক মাসের মধ্যে চালের বাজার স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম না কমা পর্যন্ত দেশে তেলের দাম কমবে না বলেও জানালেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চালের যে সমস্যা চলছে তা থাকবে না। এটা সহনীয় হবে। আগামী এপ্রিল মাসের শুরুতে বোরো ধান উঠে যাবে। এর মধ্যে আমরা ১০ লাখ টন খাদ্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন খাদ্য এসেছে। আশা করছি, এক মাসের মধ্যে চালের বাজার স্বাভাবিক হবে।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে রংপুর জেলা পরিষদ চত্বরে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

টিপু মুনশি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ছয় মাস আগে তেলের দাম ৭০০ ডলার ছিল। এখন তা বেড়ে সাড়ে ১১০০ ডলারে পৌঁছেছে। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারসহ বাংলাদেশেও তেলের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি না কমে তাহলে আমাদের দেশেও তেলের দাম কমানো যাবে না। আমরা নব্বই ভাগ তেল আমদানি করি। এজন্য টিসিবির মাধ্যমে কম দামে তেল দিতে চাইছি আমরা।

আসন্ন রমজান মাসে খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ দ্বিগুণ খাদ্য আমদানির জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজান সামনে রেখে টিসিবি বিশাল পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানির চিন্তা করছে। যাতে কোনো অবস্থায় সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশেও প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, ভর্তুকি দিয়ে হলেও মানুষের হাতে টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপণ্য পৌঁছে দিতে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রমজানে দ্বিগুণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করেছি আমরা।

টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

টিসিবির পচা পেঁয়াজ বিক্রি এবং ১০ কেজি পেঁয়াজ না কিনলে অন্য পণ্য বিক্রি না করার ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‌তখন পেঁয়াজ আমাদের স্টকে ছিল। আমরা ৪০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে তা টিসিবির মাধ্যমে ১৫ টাকা দরে দিচ্ছি। যার কারণে টিসিবি হয়তো মনে করেছে, মানুষ যদি পেঁয়াজ না নেয় তাহলে নষ্ট হবে। এই নষ্টটা কিন্তু আমার-আপনারসহ দেশের মানুষের টাকা। ভর্তুকি দেওয়া মানে কিন্তু জনগণের টাকা। সেই বিবেচনায় হয়তো বলেছে, আপনারা পেঁয়াজটা নেন। যাতে করে পচে না যায়। ১৫ টাকায় পেঁয়াজ দেওয়া কিন্তু বাজারের তুলনায় অনেক সস্তা। তবে এখন পেঁয়াজের স্টক কমে এসেছে। আগের সেই সমস্যা এখন নেই। 

টিপু মুনশি বলেন, আমরা রংপুরবাসী এক নম্বর হতে চাই। আমাদের সবাই অনুসরণ করুক। রংপুর আমাদের অনেক ঐতিহ্যের জায়গা। মুক্তিযুদ্ধে রাজপথের প্রথম শহীদ হন এখানের। এই ঐহিত্য ধরে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আগলে রেখে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

শিল্প-কলকারখানা করার জন্য রংপুরে গ্যাস আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় রংপুর তথা উত্তরবঙ্গকে বিবেচনায় রেখে উন্নয়ন করছেন। সরকার চেষ্টা করছে রংপুর অঞ্চলে প্রচুর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ করতে। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বেশ কিছু শিল্প-কলকারখানা রংপুরে করা সম্ভব হবে। যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েও আমরা এই অঞ্চলে শিল্পায়ন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তবে রংপুরের মানুষকে কাজ করার জন্য বাইরেও যেতে হবে। হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। আমরা যত বেশি বাইরে যাব, তত বেশি সুবিধা হবে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশেও যেতে হবে আমাদের।

এর আগে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, উপদেষ্টা মোজ্জামেল হক, জেলা পরিষদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম