করোনাকালে ব্যবসায় লোকসান গুনে দিশেহারা ছিলেন চাঁদপুরের যুবক কাউছার হামিদ (২৭)। এরপর খুঁজতে শুরু করেন চাকরি। একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আবেদনও করেন। আর তাতেই মিলে যায় সাড়া। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তাকে ডাকা হয় ময়মনসিংহে। আসার পরই বুঝতে পারেন তিনি পড়েছেন প্রতারকের খপ্পরে। এরপর কাটে বিভীষিকাময় ২৪ ঘণ্টা। 

অমানবিক নির্যাতনের পাশাপাশি তার কাছ থেকে প্রতারকরা হাতিয়ে নেয় এক লাখ টাকা। কৌশলে তাদের কাছ থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরে পুলিশের সহযোগিতা চান হামিদ। গতকাল শুক্রবার (১ জুলাই) দায়ের করেন মামলা। ওই রাতেই চার প্রতারককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। 

গ্রেপ্তারকৃত চারজন সম্পর্কে সহোদর। তারা হলেন- গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের সুতিরপাড়া গ্রামের মুন্সীবাড়ী এলাকার মৃত সেকান্দর আলীর ছেলে মো. সাবিকুর রহমান ওরফে শফিক মাস্টার (৩৪), শাহজাহান মিয়া (৩৫), শামীম হাসান (২৬) ও সাইদুল ইসলাম (২৪)।

শনিবার (২ জুলাই) বিকেলে গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার আবুল কাশেমের ছেলে ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী কাউছার হামিদ বলেন, আমার চাকরির খুব দরকার ছিল। সাপ্তাহিক চাকরির খবর পত্রিকায় প্রতিবন্ধী বিষয়ক সংস্থায় চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে গত ৪ মে নিয়ম অনুযায়ী জীবন বৃত্তান্ত পাঠাই। ২৮ জুন আমার মোবাইল নম্বরে কল আসে। সাবিকুর রহমান ওরফে শফিক মাস্টার নামে একজন আমাকে জানান, আমি প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট হয়েছি। মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেজন্য ময়মনসিংহে আসতে হবে।

তার কথা মতো ২৯ জুন বিকেলে নগরীর শম্ভুগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে আসি। তখন শফিক ও তার ভাই শাহজাহান আমাকে মোটরসাইকেলে তুলে গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের সুতিরপাড়া গ্রামে নিয়ে যান। রাতে সেখানে একটি ঘরে নিয়ে যাওয়ার পরই মূলত বুঝতে পারি আমি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছি। সেখানে তারা আমাকে আটকে রেখে প্রথমে কিডনি খুলে রাখার হুমকি দেন। 

এরপর ৫ লাখ টাকা দাবি করে একটি অন্ধকার কক্ষে রাতভর নির্যাতন চালান। একপর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকাশের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ১ লাখ টাকা আনিয়ে দেই। ওই দিন রাত ১১টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেন তারা। ছাড়া পেয়ে আমি বাড়ি ফিরে না গিয়ে থানায় এসে ঘটনার বিস্তারিত জানালে পুলিশ আমার কাছ থেকে মামলা নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যেই চারজনকে গ্রেপ্তার করে। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, কাউছার হামিদ সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে শুক্রবার রাতে ওই চারজনকে আসামি করে থানায় প্রতারণার মামলা করেন। মামলার পর রাতেই অভিযান চালিয়ে প্রতারকদের গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উবায়দুল হক/আরএআর