মরদেহ জিম্মি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক ৭

দীর্ঘদিন ধরেই মরদেহ জিম্মি করে চাঁদাবাজি করে আসছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কেন্দ্রিক একটি চক্র। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ওই চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। নগরীর মেডিকেলপাড়া খ্যাত লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। 

আটকরা হলেন-  আব্দুল্লাহ (৩২), রাজন (৩৫), বাদশা (৪০), এমদাদুল হক (৪০), বিপ্লব (৫০), জাহিদ হাসান (২৬) ও  জানারুল ইসলাম (২৮)। তারা রামেক হাসপাতালের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। 

পুলিশ বলছে, রামেক হাসপাতাল ও নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল থেকে মরদেহ বহনের নামে স্বজনদের জিম্মি করে আসছে একটি চক্র। মরদেহ বহনকারী মাইক্রোবাস সমিতিও খুলে বসেছে চক্রটি। আটকরা ওই চক্রের সদস্য। তারা মরদেহ জিম্মি করে চাঁদাবাজিও চালিয়ে আসছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করা হয়েছে। 

রাতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

বিশেষ এই অভিযানে অংশ নেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, রোববার বিকেল ৩টার দিকে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার সিডিএম হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল আবেদীন নামে এক রোগী মারা যান। তিনি মেহেরপুরের বাসিন্দা। নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার বন্দোবস্ত করেন তার স্বজনরা। কিন্তু মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় বাধা দেন চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য আব্দুল্লাহ (৩২) ও রাজন (৩৫)। 

তাদের ভাষ্য, ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় রাজশাহীর অ্যাম্বুলেন্সেই মরদেহ নিতে হবে। নিজের অ্যাম্বুলেন্সে নিলেও ওই টাকা মরদেহ বহনকারী মাইক্রোবাস সমিতিকে দিতে হবে। 

এতে চরম বেকায়দায় পড়েন মৃতের স্বজনরা। পরে তারা নগর দোয়েন্দা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে তখনই অভিযান চালিয়ে  আব্দুল্লাহ  ও রাজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্যদের আটক করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীর্ঘদিন ধরে এই কাণ্ড চালিয়ে আসার কথা স্বীকার করেছেন আটকরা। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই রামেক হাসপাতাল এলাকায় রোগী ও মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স-মাইক্রোবাস চালকেদের চক্র সক্রিয়। রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে তারা তিন থেকে চারগুন বাড়তি ভাড়া আদায় করে আসছেন। বার বার উদ্যোগ নিয়েও এই চক্রকে ভাঙতে পারেনি প্রশাসন। 

গত বছরের মার্চ মাসে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাইক্রোবাস মালিক ও চালকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতি মাইল ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে। ওই সময় বৈধ ৬৬টি মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে ঢোকার অনুমতি পায়।

তারপরও নিয়ম ভেঙে হাসপাতালের ভেতরেই অবস্থান করছে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো। আর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কিংবা মাইক্রোবাস অবস্থান নিয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের বাইরের সড়কে। রোগী কিংবা মরদেহ হাসপাতাল থেকে বের হলেই জিম্মি করছেন এই চক্রের সদস্যরা। এ নিয়ে প্রায়ই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর