নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মসজিদ নির্মাতা শেখ নাসির উদ্দিন মাইজভান্ডারী (৭২) নামের এক বৃদ্ধের পায়ুপথে টর্চলাইট ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চরওয়াপদা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর ছেলে।

রোববার (৩ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে দেড় ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর টর্চলাইটটি বের করা হয়। বর্তমানে বৃদ্ধ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন আছেন।

গতকাল শনিবার (২ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নের থানার হাট-সংলগ্ন আমানতগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার শেখ নাসির উদ্দিন মাইজভান্ডারি সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ধানের শীষ গ্রামের মৃত শেখ ফরিদ উদ্দিনের ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী সদর হাসপাতেল আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেনারেল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান মানিকের নেতৃত্বে তিনজন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে বৃদ্ধের পায়ুপথ থেকে টর্চলাইটটি বের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ১ নং ওয়ার্ডের পুরুষ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বৃদ্ধ শেখ নাসির উদ্দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে থানার হাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আবুল হোসেন সানাজের নেতৃত্বে খোকন, দিদার, সালাউদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ও ফখরুলসহ ১২ থেকে ১২ জন লোক আমাকে ধরে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আমকে ধরে আমার পায়ুপথ দিয়ে টর্চলাইট ঢুকিয়ে দেয়। এতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে তারা আমাকে ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করে তিনি বলেন, নুরবানু নামে এক বৃদ্ধার দান করা ওয়াকফ জায়গায় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল আলমের অর্থায়নে একটি মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করি গত মাসে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার তানভির উদ্দিন, চরওয়াপদা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দুলাল উদ্দিন কিরণ মসজিদ নির্মাণের কাজ তাদের দিতে বলে। আমি রাজি না হওয়ায় একাধিকবার তারা আমার ওপর হামলা চালায়। চেয়ারম্যান স্থানীয় লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে কিছুদিন কাজও বন্ধ করে রাখে।

এসব নিয়ে আমি বাদী হয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। আদালতেও মামলা করি। তারই জের ধরে এঘটনা ঘটিয়েছে।

নাসিরউদ্দিনের ছেলে মোজাম্মেল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্বৃত্তরা আমার বাবার মুখ বেঁধে পাশের জঙ্গলে নিয়ে মারধর করে। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমার বাবার পায়ুপথে একটি টর্চলাইট ঢুকিয়ে দেয়। আমরা চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেছি। আমি এ ঘটনার কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার সঙ্গে তো আমার কোনো বিরোধ নাই। তারা মসজিদ করছে, মসজিদের জায়গাজমি মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব হতে পারে। এলাকার লোকজন রাস্তা নষ্ট হয়, এ জন্য বাধা দিয়েছে। আমার এতে কী করার আছে? রাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তো আশপাশের বাড়ির মানুষ শোনার কথা। তারা তো কিছু শুনে নাই। তারা তো কেউ কিছু জানে না। আমাকেও কিছু জানায় নাই।

এ বিষয়ে চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবপ্রিয় দাশ বলেন, বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এক উপপরিদর্শককে (এসআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসিব আল আমিন/এনএ