ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জির বাড়িতে জেলা প্রশাসক

রাজশাহীর ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি বলেছেন, ভাষা আন্দোলন, ভাষাশহীদ ও ভাষাসৈনিক আমাদের আবেগের জায়গা। সমগ্র রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এদের একটা প্রচ্ছন্ন প্রভাব আছে। তাদের সম্মান জানানো মানেই পুরো দেশের জনগণকে সম্মান দেওয়া। এইভাবে ভাষাসংগ্রামীদের সম্মানিত করে প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। এর আগে আমরা এমনটি দেখিনি। দাওয়াত দিয়েছে, আমরা চলে গেছি। কিন্তু কীভাবে যাবো? হেঁটে যাবো , নাকি উড়ে যাবো তার খোঁজখবর নেই। আজকে তিনি জেলা প্রশাসককে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি কিছুই না, তিনি সম্মান জানিয়েছেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে।
 
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ বাসভবনে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল  ফুল ও ফলের ঝুড়ি নিয়ে নগর বেলদারপাড়া এলাকায় ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জির বাড়িতে যান। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন জেলা প্রশাসক।
 
আকস্মিক জেলা প্রশাসককে নিজ বাসায় পেয়ে খুশি হন ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষ একজন প্রধানমন্ত্রী। কোথায় কী করতে হবে, সবগুলো জায়গায় স্পর্শ করছেন তিনি। 

এই ভাষাসৈনিক বলেন, আমাদের সময় একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলায় রাখার প্রতিযোগিতা। সন্তানদের নাম কত সুন্দরভাবে বাংলায় রাখা যায় সেটিরও প্রতিযোগিতা হতো। এখন এসব নেই। সবখানেই ইংরেজির আধিপত্য। এই ভাষাসৈনিক সর্বস্তরে বাংলার আবশ্যিক প্রচলন নিশ্চিত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে বাংলার পাশাপাশি প্রয়োজনে ইংরেজি প্রচলনেরও আহ্বান জানান। 

ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জির বাসা থেকে বেরিয়ে জেলা প্রশাসক নগরীর শিরোইল মঠপুকুর এলাকায় আরেক ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের বাড়িতে যান। তাকেও ফুল ও ফলের ঝুড়ি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক। শারীরিকভাবে অসুস্থ ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের খোঁজখবর নেন। তার স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলেন জেলা প্রশাসক। 

 ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের বাড়িতে জেলা প্রশাসক

বেরিয়ে যাওয়ার সময় জেলা প্রশাসক ভাষাসৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের ভুলিনি। জাতি আপনাদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। 

এর আগে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি, এই সকল আন্দোলনের সুতিকাগার ছিল আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল, সেখানেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়েছিল। এই জিনিসটা বর্তমান সরকার খুব বেশি উপলব্ধি করতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, ভাষা আন্দোলনই ছিল আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল সুতিকাগার। 
 
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ভাষার জন্য যারা আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, তাদের যদি আমরা সম্মান জানাতে পারি। তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদা বিশ্বের কাছে অনেকগুন বৃদ্ধি পাবে। তারা আন্দোলন করেছেন বলে আমরা নতুন প্রজন্ম বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশকে বিনির্মানের সুযোগ পেয়েছি। তাদের সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব। 

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভিপি শাখা) তারিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা-১) নাজমুল হুসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর