সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আজ শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দির পরিদর্শন করেছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা।

এ সময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। একইসঙ্গে তালিকা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও পরিবারের সঠিক সংখ্যা জানাতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আশ্বাস প্রদান করেন।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করেছেন। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সব ইউনিট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। ভুক্তভোগীদের ক্ষতি যা হয়েছে তা সমাধান করা গেলেই সমাধান হবে না, এই পরিস্থিতিতে তাদের মানসিক ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। মানসিকভাবে ভীতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি ও চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত তারা আগের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।’

আরও পড়ুন : ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু, জন্ম নিল নবজাতক

তিনি বলেন, ‘আজ যত মানুষ এখানে আছে গতকাল যদি এতো মানুষ এখানে থাকত এই সমস্যা হতো না। সবাই মোবাইল-ক্যামেরা নিয়ে চলে আসছেন, মাথা নাড়াচ্ছেন আপনাদের লজ্জা থাকা উচিত যে, আপনাদেরই প্রতিবেশীর ঘর বাড়ি এভাবে ভেঙে রেখে গেছে। আপনাদের উচিত ছিল এগুলো প্রতিহত করা। যে অন্যায় করছে তার বিচার আমরা চাই কিন্তু আপনারাও তো অন্যায় করছেন! এখানে পুলিশ প্রশাসন সবসময় থাকবে, আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনাদের সহযোগিতার হাতটা না বাড়ানো পর্যন্ত কেউ কিছু করতে পারবে না, আপনাদের সহযোগিতার হাতটা খুব জরুরি। আজ পর্যন্ত নড়াইলে এ রকম ঘটনা কখনো ঘটেনি। আপনারা যারা দিঘলিয়া ও আশপাশের মানুষ আছেন আপনাদের লজ্জা লাগা উচিত যে আপনাদের এখানে নড়াইলের প্রথম এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল! ’

‘একটু ভেবে দেখেন ভাই, আপনাদের পরিবারের কাউকে এমনভাবে আঘাত করলে আপনাদের কেমন লাগত? কেউ অন্যয় করলে আইন আছে প্রশাসন আছে প্রচলিত আইনে বিচার হবে, কিন্তু আমি আপনি কে যে বিচার করব? যাই হোক ভাই আপনাদের কাছে পা ২টা ধরছি এই ধরনের ঘটনা আর ঘটাবেন না। এখানে আপনারা যারা বসবাস করছিলেন এইটুকু নিশ্চিত থাকেন আপনার স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারবেন। এখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীরা আছেন, ইনশাআল্লাহ আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না।’ 

উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে আকাশ সাহা নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তের বাবা অশোক সাহাকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ওই দিন সন্ধ্যার পর স্থানীয় একটি মন্দির ও দিঘলিয়া বাজারের ১০টি দোকান ভাঙচুর এবং একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

এসকেডি