রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নিষ্ক্রিয়তায় নগরীর শিরোইল দোশর মণ্ডলের মোড় এলাকায় বিধি অমান্য করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে নিমার্ণাধীন ভবনের পাশের তিনটি ভবন। এ নিয়ে দফায় দফায় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের মালিক সৈয়দা ফাতেমা পারভীন। 

তিনি শিরোইল দোশর মণ্ডলের মোড় এলাকার মোবারক হোসেন শাহীনের স্ত্রী। স্টেশন সড়কের উপরেই তাদের বাড়ি। দুই দফা ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত তার পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দা ফাতেমা পারভীনের বাড়ির পাশেই সুফি মঞ্জিল। এই ভবনটির মালিক সুফি আব্দুল মাবুদ এবং সুফি আব্দুল নাঈম ফারুকের পরিবার। সেখানেই ১০ তলা বিশিষ্ট নন্দন টাওয়ার নির্মাণ শুরু করেছে রাজশাহীর কমিটেড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। 

২০২০ সালের শেষে দিকে পুরোনো ভবন অপসারণ শুরু হয়। এরপর সুরক্ষা ছাড়াই শুরু হয় পাইলিং। মাটি অপসারণ শুরু হলে আশপাশের ভবনগুলোতে ফাটল দেখা দেয়। 

প্রতিকার পেতে ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী উন্নয়ন (আরডিএ) কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সৈয়দা ফাতেমা পারভীন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও প্রতিকার পাননি। শেষে চলতি বছরের ৭ মার্চ আরেক দফা অভিযোগ দেন আরডিএতে। বিষয়টি নিয়ে দেখা করেন আরডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে। এরপর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। আরডিএর ইমারত পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে যান। 

সরেজমিনে পরিদর্শনের পর আরডিএ জানিয়েছে, ভবনটির বেজমেন্টসহ ১০ তলা অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নকশা অমান্য করে ফাউন্ডেশন লেভেল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ করেছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। এতে নকশা অনুমোদনের ১৩ নম্বর শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে। এছাড়া ভবনটির নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্যের সাইনবোর্ডও পাননি আরডিএ পরিদর্শক। এতে নকশা অনুমোদনের ২ নম্বর শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে।

এ ঘটনায় নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে তা কেন ভেঙে ফেলা হবে না সাত দিনের মধ্যে তার জবাব চায় আরডিএ। একই সঙ্গে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ৬ জুন আরডিএর অথোরাইজ অফিসার আবুল কালাম আজাদ এই নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে দুই পক্ষকে ২২ জুন শুনানির জন্য ডাকেন। শুনানি শেষে নির্মাণ ত্রুটি সারানো এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ দেয় আরডিএ। 

ক্ষতিগ্রস্ত সৈয়দা ফাতেমা পারভীন জানান, আরডিএকে দ্বিতীয় দফা অভিযোগ দেওয়ার পর কিছুদিন নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। কিন্তু গত রোববার (২৪ জুলাই) সকালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে এসে ফের নির্মাণকাজ শুরু করে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। বাধা দেওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। সোমবারও (২৫ জুলাই তারা নির্মাণকাজ চালিয়েছে। এই ঘটনায় আরডিএকে তৃতীয় দফা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

তিনি আরও জানান, তার বাবা সৈয়দ আহম্মদ হোসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া বড় দুই ভাই সৈয়দ হামিদ হোসেন এবং সৈয়দ এবরার হোসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না। কোথায় গেলে প্রতিকার পাবেন- এই প্রশ্ন তার।  

সৈয়দা ফাতেমা পারভীন জানান, আরডিএকে আগে দেওয়া অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, মহানগর পুলিশ কমিশনার ও বোয়ালিয়া মডেল থানায় দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকারই পাননি। শেষে গত ২২ জুন আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ডেভেলপারকে। প্রয়োজনে তিনি আদালতে মামলা করবেন।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দা ফাতেমা পারভীনের মালিকানাধীন নিহার কুঠিরের উত্তর দিকের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় তলা মিলে চারটি শোয়ার ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। নিচতলার দুটি শোয়ার ঘরের মেঝে দেবে গেছে। রান্নাঘরের দেয়ালেও আড়াআড়ি ফাটল। বাড়ি লাগোয়া ঘরের দেয়ালেও ফাটল ধরেছে।

অন্যদিকে নির্মাণাধীন ভবন ঘুরে দেখা গেছে, চারপাশে নিয়ম মেনে জায়গা ছাড়েননি নির্মাণকারী। আশপাশের বাড়ি ঘেঁষেই উঠছে ভবন। এছাড়া নির্মাণকাজের খননের ফলে পাশের পাকা রাস্তাটিও পড়েছে ঝুঁকিতে।  

ঘটনাস্থলেই ছিলেন কমিটেড ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের এজিএম মো. মাসুদ। আরডিএর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভবন নির্মাণের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তবে শিগগিরই পাশের ভবন মালিকের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটমাট করে দেওয়া হবে বলে দাবি করেন তিনি। 

যোগাযোগ করা হলে দাপ্তরিক কাজে রাজশাহীর বাইরে থাকার কথা জানান কমিটেড ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক আলী। তবে ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

নির্দেশনা অমান্য করে ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথোরাইজ অফিসার আবুল কালাম আজাদ। 

এ বিষয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি আমরা খোঁজ নেব। নির্দেশনা অমান্য করে নির্মাণকাজ চালালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর