আহতদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে

পঞ্চগড় জেলা দায়রা জজ আদালতে মারধর করা মামলায় আজিরত (৫০) ও রয়েল (২৮) নামের দুই আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর জেরে মামলার বাদীর স্ত্রী ও শাশুড়িকে মারধর করা হয়েছে। রুবিনা আক্তার (৩০) নামের আসামিপক্ষের এক স্বজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে।

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা দায়রা জজ আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত রুবিনা আক্তারকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে। অন্যদিকে মামলার বাদী মোকছেদুল হকের পরিবারের তিন সদস্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন মোকছেদুল রহমান স্ত্রী আজিমা বেগম (২৫), শাশুড়ি সখিনা বেগম (৫৫) ও খালাশাশুড়ি আরজিনা বেগম (৫০)। অন্যদিকে অভিযুক্ত রুবিনা আক্তার পঞ্চগড় পৌরসভার খালপাড়া এলাকার নুরুল হকের স্ত্রী ও আসামি রয়েলের ফুফাতো বোন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া এলাকার জয়েন উদ্দিন শেখের ছেলে মোকছেদুল হক বসতবাড়ির আঙিনায় ফলদ ও বিভিন্ন গাছপালা লাগান। সেই গাছের ডালাপালার ছায়া একই এলাকার বাসিন্দা মৃত মহির আলী ছেলে আজিরত ও তার পরিবারের জমির ওপর পড়ে। এতেই দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগে। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জমির মালিক আজিরত ও তার স্বজনরা দা, করাত ও কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোকছেদুলের বাড়িতে যান। পরে তার গাছের ডালপালা কেটে নষ্ট করেন।

এতে মোকছেদুলের মা তাদের বাধা দিতে গেলে তাকেসহ তার পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা ও মারধর করে আজিরতের পরিবার। পরে ঘটনাস্থল থেকে মোকছেদুলকে আহত অবস্থায় তার স্বজনরা দ্রুত উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

অন্যদিকে মোকছেদুলের বাকপ্রতিবন্ধী পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে মারেয়া শেখকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে আজিরত ও তার পরিবারের লোকজন তার বাঁ হাতের আঙুল পুড়িয়ে দেয়। মোকছেদুল ৯ ফেব্রুয়ারি আজিরতকে প্রধান আসামি করে তার পরিবারের আটজনের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১-এ একটি মামলা করেন।

মঙ্গলবার আদালতে জামিন আবেদন করতে যান আজিরত ও বাকি আসামিরা। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১-এর বিচারক হুমায়ুন কবীর প্রধান আসামি আজিরত ও ২ নম্বর আসামি রয়েলের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকি ছয় আসামিকে জামিন দেন।

মামলার বাকি আসামিরা হলেন একই পঞ্চগড় পৌরসভার খালপাড়া এলাকার রফিজ উদ্দিনের ছেলে বাবু (১৮), বানিয়া পাড়া এলাকার ছিদ্দিকের ছেলে রাশেদুল (১৮), আজিরতের স্ত্রী সাহেদা (৪৫), টুনিরহাট এলাকার সনু মোহাম্মদের স্ত্রী রাহেলা খাতুন (৩৫), চছপাড়া এলাকার আব্বাস আলীর স্ত্রী মর্জিনা খাতুন (৩০) ও বানিয়াপাড়া বাবুলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।

রায় শোনার পর ২ নম্বর আসামি রয়েলের ফুফাতো বোন রুবিনা আক্তার হঠাৎ মামলার বাদী মোকছেদুলের স্ত্রী, শাশুড়ি ও খালাশাশুড়িকে আদালতের সিঁড়ি থেকে মারতে মারতে আদালত চত্বরে নিয়ে যান। সেখানেও তাদের মারধর করেন। এতে কোর্ট পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতেনাতে রুবিনা আক্তারকে আটক করে সদর থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে বাদী মোকছেদুলের আহত স্ত্রী, শাশুড়ি ও খালাশাশুড়িকে দ্রুত উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা দায়রা জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মকবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, আজ দুপুরে মোকছেদুল রহমানের করা মামলায় আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এতে দুজন আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। পরে আসামির স্বজন রুবিনা আক্তার বাদীর স্বজনকে মারধর করলে আমরা তাকে আটক করে সদর থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাছ আহমদ ঢাকা পোস্টকে জানান, বাদীর স্বজনকে মারধরের ঘটনায় আসামির স্বজন রুবিনা আক্তার নামের এক নারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

মো. রনি মিয়াজী/এনএ