ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় আট মাস বয়সী শিশু সুরাইয়া নিহত হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কোনো মামলা বা কাউকে আটক করা হয়নি। তবে অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

মামলা ও আটকের বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা বা আটক হয়নি, জানতে চাইলে ওসি বলেন, ঘটনা যেহেতু নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট, তাই এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার বা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। ইতোমধ্যে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামকৃষ্ণ বর্মণকে আহ্বায়ক করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার (পীরগঞ্জ সার্কেল) আহসান হাবীবসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ভারী বস্তু বা বুলেটের আঘাতে সুরাইয়ার মৃত্যু হতে পারে বলে ময়নাতদন্ত শেষে প্রাথমিক ধারণা করেছেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, সুরাইয়ার মাথার আঘাত গুরুতর ছিল। ভারী কোনো বস্তু বা বুলেটের আঘাতে সুরাইয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে খুলির একটি অংশ পাওয়া যায়নি।

সুরাইয়ার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান বলেন, শিশু নিহতের ঘটনাটি আসলেই হৃদয়বিদারক। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) তোফাজ্জল হোসেন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটের ফলাফল নিয়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং ৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় সুরাইয়ার মা তাকে কোলে করে নির্বাচনী ফল শুনতে এলে সুরাইয়ার মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে দাবি করে বিক্ষুব্ধ জনতা রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাহিদ ইকবালসহ দুই পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ওসিকে উদ্ধার করে। আর দুই পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রাত পর্যন্ত এলাকাবাসী রাণীশংকৈল থানার সামনে টাইয়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।

এ ঘটনায় রাতেই ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহবুবুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেন ও সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মীরডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিহত সুরাইয়ার জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।

আতঙ্কে ভাংবাড়িবাসী
নির্বাচনের দিন ঘটে যাওয়া ঘটনার পর এলাকাজুড়ে এখনো চলছে আতঙ্ক। চারদিকে সুনসান নীরবতা। এলাকাবাসী বলছেন, আমরা এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছি। এ নিয়ে যেন আমাদের কোনো বিপদে ফেলা না হয়। অযথা হয়রানি বা মামলায় না জড়ানো হয়। আমরা নিরীহ মানুষ।

এ ব্যাপারে সুরাইয়ার বাবা বাদশাহ মিয়া বলেন, আমি আমার মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছি। এ নিয়ে আমি কোনো মামলা-মোকদ্দমায় যাব না। আমি গরিব মানুষ। আমার তেমন কোনো টাকাপয়সা নেই মামলা করার বা মামলা চালানোর।

তিনি আরও বলেন, আমি চাই আর কেউ যাতে কোনো বিপদে না পড়ে। আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। আমাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা ভয়ে আছেন। আমরা এর মীমাংসা চাই। আমাদেরকে আর যাতে কোনোভাবেই বিপদে না ফেলা হয়।

এম এ সামাদ/এনএ