ডিসেম্বরের মধ্যে এই সরকার বাংলাদেশে থাকতে পারবে না : দুদু
‘এমনিতেই গরম, এর ভেতরে বিদ্যুৎ নাই, গ্যাস নাই, মানুষের ঘরে খাবার নাই। এগুলো সহ্য হয়? আমার কেন যেন মনে হয় এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সরকার বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। যেই সরকার মসজিদে এসি বন্ধ করে, এরা মানুষ নাকি জানোয়ার? বিদ্যুৎ কি বিনা পয়সায় দেয়? টাকার বিনিময়ে বিদ্যুৎ নিব, বিদ্যুৎ থাকবে না কেন? লাথিয়ে সোজা করে দেব।’
শনিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আযোজিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
বিজ্ঞাপন
এ বছরই সরকার হটানোর বছর মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ বছর হবে পরিবর্তনের বছর। এ বছর বর্তমান সরকারের শেষ বছর। এ বছর নতুন একটি পতাকা উড়বে। যে পতাকা সাম্যের পতাকা। আপনার পিতাও রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তারেক রহমানের পিতাও রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আপনার মাতা গৃহিণী ছিলেন। আর তারেক সাহেবের মাতা এ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। আপনি আপনার পিতার কথা সার্বক্ষণিক বলেন। তারেক রহমানও তো যোগ্য মায়ের যোগ্য সন্তান। আমরা তাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেব।
সাবেক সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ করে দুদু বলেন, প্রথমবার জেনারেল মইন ইউ আহমেদের নাম শোনা যায়, এটা একটা মুনাফাখোর। বিএনপি তাকে সেনাপ্রধান করেছিল। সেই মইন ইউ আহমেদ কোথায় এখন?
বিজ্ঞাপন
আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা বলেন, প্রথমে সেনাবাহিনীর ঘাড়ে চেপে এসেছিলেন, দ্বিতীয়বার তো ইলেকশনই হয়নি। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর এমপি সাহেবের বউ, ছেলেরা প্রতিবেশীরা যদি তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে, তাহলেই সে ভাবে হয়তো আমার চুরি ধরা পড়ে গেছে, সবাই জেনে গেছে। এই এমপিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সরকারের লজ্জা-শরম নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, যার এক কান কাটা, সে আড়ালে চলে; আর যার দুই কান কাটা, সে সড়কের মাঝ দিয়ে চলে। এ সরকারের দুই কান কাটা। বিদ্যুৎকেন্দ্র হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে। সবগুলোর মালিক আওয়ামী লীগাররা।
তিনি বলেন, কাগজে বেরিয়েছে, বিদ্যুৎ না দিলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। বিদ্যুৎ দিবেন না ক্যাপাসিটি চার্জ কেন দেব? বিদ্যুৎও প্রি-পেইড করেছেন। আগে টাকা নিয়ে বিদ্যুৎ দিবেন না কেন? মাইরের ওপর ওষুধ নাই। পাকিস্তানিরা মার খেয়ে পালিয়েছে। আইয়ুব খানকে তাড়িয়েছি, এটা কোন খা যে তাড়াতে পারব না?
মানুষ প্রতিবাদ চায়, ঘেরাও চায়। আপনি তারেক সাহেবকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে রেখেছেন। বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে রেখেছেন। একেবারে বিদ্বেষপূর্ণ একটা পরিবেশ। তারেক রহমানকে নিম্ন আদালত সাজা মওকুফ করেছিল। সে ভদ্রলোক দেশেই থাকতে পারলেন না। এই বাংলাদেশের জন্য শহীদ জিয়া থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছে। অনেক পরিবার তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আজ আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ স্বাধীন নয়। তারা রাস্তা থেকে মেয়েদের তুলে নিয়ে যায়। ফরিদপুরে এক ভাই ছাত্রলীগের সভাপতি, এক ভাই যুবলীগের সভাপতি। তাদের দুই হাজার কোটি টাকার বিচার হয় না। অথচ বেগম জিয়ার মিথ্যা মামলায় সাজা হয়।
বেগম জিয়া কখনো কোন নির্বাচনে পরাজিত হননি। তাকে জেলে রেখেছেন। জেনারেল আজিজের ভাই ফাঁসির আসামি তার সাজা মওকুফ করেছেন। কেউ জানে না। সে দেশের বাইরে যাওয়ার পর সবাই জেনেছে। এটা একটা দেশ। আপনি তাকে ক্ষমতার জোরে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর বেগম জিয়ার মতো মানুষ আজ বিনা বিচারে জেলখানায়। একজন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আজ ফাঁসির আসামি। ইলিয়াস সাবেক এমপি, এমন একজন লোককে ধরে নিয়ে গেলেন। আজ পর্যন্ত সে ফিরে আসেনি। কী অদ্ভুত একটা দেশ!
ছয়জন পুলিশ বাহিনীর সদস্যকে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আজ আপনি তাদের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। প্রশাসনে যারা আছে, তাদের অবাধ লুণ্ঠন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী, আপনার কার্যালয়ের এসি কি বন্ধ? মন্ত্রীদের এসি কি বন্ধ? তাহলে মসজিদ ও মন্দিরের এসি কেন বন্ধ থাকবে?
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আপনি বলেন আপনি পদ্মা সেতু বানিয়েছেন। এত বড় সাফল্য, তাহলে কেয়ারটেকার সরকার দিন না কেন? তাহলে ভোট দিচ্ছেন না কেন? কোথাও একটা কিন্তু আছে। রিকশাওয়ালা, ক্ষেতমজুর থেকে শুরু করে সবাই এটা জানে। কিছু মানুষ আছে পানি ঘোলা করে খায়, আপনিও দিবেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন ধানের শীষের অনুকূলে আছে।
এ সময় মহানগর বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউছুফ খান টিপুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান প্রমুখ।
এনএ