কুমিল্লায় বয়স্ক ভাতার টাকা মোবাইল নম্বরে এলেও সেই টাকা উত্তোলনের আগেই ‘হাওয়া’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সমাজসেবা কার্যালয় থেকে মেসেজ পাওয়ার পর এজেন্টের কাছে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে তারা দেখেন, তাদের হিসাবে কোনো টাকা নেই।

বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদের বয়স্কভাতাপ্রাপ্ত প্রায় ২০ জনের সঙ্গে ঘটে এ ঘটনা। মোট ৫৪ জন পেয়েছিলেন। অনেকে আবার কোনো টাকাও পাননি।

আদ্রা ইউনিয়নের পেরপেটি গ্রামের বাসিন্দা ছেলজান খাতুন নামের এক ভুক্তভোগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান অফিসে বয়স্ক ভাতার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। মোবাইলে নাকি টাকাও এসেছিল। আমার নাতি আমাকে বলল, সমাজসেবা অফিস থেকে ফোন করে পিন নম্বর চাওয়ায় আমি পিন নম্বর দিয়েছি। পরদিন টাকা তুলতে গিয়ে দোকানে গিয়ে শুনি দোকানদার বলতেছে, আমার মোবাইলে নাকি টাকা নেই।

আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) রকিবুল হাসান লিমন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চলতি বছর ইউনিয়নের বয়োবৃদ্ধ ১০১ জন পুরুষ-নারীকে বয়স্ক ভাতার জন্য মনোনীত করা হয়। গত মাসে (জুলাই) তাদের বেশির ভাগের নগদ অ্যাকাউন্টে ১ বছরের জন্য ৬ হাজার টাকার মেসেজ আসে।

পরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের লোক পরিচয় দিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ জনের নম্বরে ফোন করে অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর চাওয়া হয়। তাদের মধ্য থেকে ২০ থেকে ২৫ জন পিন নম্বর দিয়ে দেন। তারপর তারা স্থানীয় এজেন্টের কাছে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। এ ছাড়া ১০১ জনের নাম দিলেও এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জনের মোবাইলে কোনো মেসেজ বা টাকাই আসেনি বলে জানান তিনি।

বয়স্কভাতাপ্রাপ্ত এসব মানুষদের ডিজিটাল সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় চাওয়ামাত্র সঙ্গে সঙ্গে তারা পিন নম্বর দিয়ে দেন। পরে নগদ অ্যাজেন্ট থেকে ক্যাশ আউট করতে গিয়ে দেখে অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, যাদের মোবাইলে ভাতার টাকা এসেছে, তাদের তালিকা সমাজসেবা অধিদপ্তর আর চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আছে কেবল। কোন হ্যাকার যদি সেটা করে, তবে তারা কী করে জানল এই ১০১ জনকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে? তাদের মোবাইল নম্বরই বা পেল কোথায়? এটার সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা দরকার বলেও জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।

বরুড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সমস্যাটি সারা দেশে হচ্ছে। ভাতাপ্রাপ্তদের তালিকা যে শুধু সমাজসেবা অফিস কিংবা চেয়ারম্যান অফিসে থাকে, তা নয়। এ তালিকা নগদের কাছেও আছে। আমাদের কাছে তালিকা থাকলেও আমরা চাইলেই পিন নম্বর দিয়ে কারও টাকা তুলতে পারব না। কারণ আমরা আইটিতে অত দক্ষ নই।

তিনি আরও বলেন, কারও পিন নম্বর চেয়েছে এমন অভিযোগ পেলে যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছে, সেটি আমরা নগদের কুমিল্লার রিজিয়নের প্রধানের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়ে দিই। আর সুনির্দিষ্ট কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ওই নম্বরের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

নদগের কুমিল্লা রিজিয়নের টেরিটরি অফিসার গৌরব কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নগদে বয়স্ক ভাতার টাকা আসার বিষয়টি হলো জি টু পি। সরকার থেকে সোজা টাকা আসে পাবলিকের কাছে। যখন কোনো পাবলিক ক্যাশ আউট করে, ঠিক তখনই নগদ জানতে পারে এ অ্যাকাউন্টটি ভাতাধারী অ্যাকাউন্ট ছিল। এর আগে জানার কোনো সুযোগ নেই। আর নরমালি হ্যাকাররা মূলত ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটগুলোকেও টার্গেট করে থাকে বলে আমরা ধারণা করছি।

তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটগুলো অত প্রটেক্টটেড না হওয়ায় সেখান থেকে ডাটা হ্যাক করে নিতে পারে। আবার ভাতার জন্য অনেকেই হাটবাজারের বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানে গিয়ে আবেদন করে থাকেন। সেখান থেকেও ডাটা নিতে পারে হ্যাকাররা। পিন নম্বর জানানোর বিষয়ে আরও সচেতন থাকা জরুরি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা আফরিন মুস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এনএ