বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেছেন, অস্ত্র নিয়ে রাজপথে থাকার কোনো সুযোগ বিএনপির নেই। আওয়মী লীগ আমাদেরকে রাজপথে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ দেয় না। দলের কর্মসূচি পালন করতেও দেয় না। সেখানে পুলিশ কীভাবে বলে, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমরা গুলি করতে গেছি? সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশি ছিল। যদি বিএনপি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নামতো, তাহলে দু-চারটা পুলিশের লাশও আজ লাশকাটা ঘরে থাকতো। 

সোমবার (০১ আগস্ট) দুপুরে ভোলায় ‘পুলিশের গুলিতে’ নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আব্দুর রহিম মাতুব্বরের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা। 

তিনি বলেন, রোববার কী ঘটনা ঘটেছে তা দেশবাসী দেখেছে। আমরা বিগত ১৪ বছর ধরে মায়েদের কান্না শুনছি। আমরা আর এমন হৃদয়বিদারক কান্না শুনতে চাই না।

এদিকে সংর্ঘর্ষের ঘটনায় আহত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলমকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রদলের নির্বাহী সদস্য মহসিন সবুজ। 

তিনি আহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, বর্তমানে রাজধানীর কমফোর্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে নূরে আলম। তাকে দেখতে গিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হামলায় যে কয়জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে নূরে আলম ভাই সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তার মাথা, বুক, হাত-পা ও মুখমণ্ডল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, নিহত আব্দুর রহিমের দাফন বিকেলে তার বাড়ি দক্ষিণ দিঘলদি ইউনিয়নের কোরালিয়া গ্রামে সম্পন্ন হয়েছে। তার মতো নিরীহ একজন মানুষকে গুলি করে হত্যা করার ন্যাক্কারজনক ঘটনা মানতে পারছে না এলাকাবাসী। 

তিনি বলেন, পুলিশ বিনা কারণে রোববার আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। সেইসাথে এখন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করছেন। পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিমকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। গতকালের ঘটনার পর পুলিশ পুরো জেলায় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। এতে নেতা-কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না।

এদিকে ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ ৭৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। রোববার (৩১ জুলাই) রাতে ভোলা থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন উপপরিদর্শক জসিম। এর একটিতে নাম উল্লেখ করে ৭৫ জন ও অজ্ঞাত ৩০০ জন এবং আরেকটি মামলায় ৩০০ জন আসামি করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, একই লোক দুই ধরণের অপরাধ সংঘঠিত করেছেন। এজন্য দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ছয়জন, দৌলতখানের একজন ও বোরহানউদ্দিনের তিনজন রয়েছেন। এছাড়া মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। 

তিনি জানান, পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটি সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগ। অপরটি আব্দুর রহিম মাতুব্বরকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রোববার (৩১ জুলাই) ভোলা পৌরসভার মহাজনপট্টিতে জেলা বিএনপির আয়োজনে সমাবেশ ও বিক্ষোভে সংঘর্ষের ঘটনায় আব্দুর রহিম মাতুব্বর নিহত হন। এছাড়া অর্ধশত নেতাকর্মী ও ১০ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি- আব্দুর রহিমের মৃত্যু বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে হয়েছে। তবে বিএনপি বলছে, গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর